শার্শায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ সহ ৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিস্তম্ভ অযত্ন অবহেলায়

জয়নাল আবেদীন, বেনাপোল প্রতিনিধি: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীরশ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে তিনি তাদের অন্যতম।

মহান বিজয় দিবস বাঙ্গালী জাতির একটি অবিস্বরণীয় দিন। দেশ মাতৃকার টানে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদেরকে সকল মানুষ এই দিনটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। লক্ষ লক্ষ মা বোনদের ইজ্জত রা আর দেশকে শত্রুমুক্ত করে যারা এ দেশ স্বাধীন করেছিল তাদেরই একজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ। তৈরী করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভ।

নূর মোহাম্মদ সহ ৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চিরতরে ঘুমিয়ে আছে শার্শার সীমান্তবর্তী কাশিপুর গ্রামের পুকুর পাড়ের এই স্তম্ভে। এই স্মৃতিস্তম্ভ আজ পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। সরকারী ভাবে রক্ষণা-বেক্ষন না করায় সীমান্ত ঘেষা অজপাড়া গায়ের এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাজারশালা আজ গো-চারণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে।

যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্ত ঘেষা গ্রামের নাম কাশিপুর। ওপারে ভারতের চব্বিশ পরগনার বয়রা। বাংলাদেশ সীমান্তের গোবিনাথপুর আর কাশিপুর মৌজার সীমানার কাশিপুর পুকুর পাড়ে চিরতরে ঘুমিয়ে আছে ৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভ।

তারা দেশের জন্য প্রাণ হারিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে আছে এখানে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখসহ অপর ৬ জনের মধ্যে রয়েছে শহীদ সিপাহী এনামূল হক, শহীদ সিপাহী আঃ ছাত্তার, বাহাদুর গেরিলা শহীদ, শহীদ এম সিএ সৈয়দ আতর আলী, শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ বিডিআর’র একজন ল্যান্স নায়েক ছিলেন।

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটের সময় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা সহ ঝিকরগাছার গোয়ালহাটি এলাকায় টহলরত থাকা কালে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক অবিস্বরণীয় সম্মুখ যুদ্ধে নিজ জীবন উৎসর্গ করে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশের ইতিহাসে। গোয়ালহাটিতে তার মৃত্যুর পর কাশিপুর সীমান্তের মুক্ত এলাকায় পুকুর পাড়ে দাফন করা হয়।

তাদের ৭ মাজারশালার এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো প্রতিবছর ২/১ বার ধুয়ে মুছে জাতীয় দিবসগুলো পালন করেই যেন দায়িত্ব শেষ। কিন্ত স্মৃতিস্তম্ভসহ এখানকার মাজারশালা গুলো সরকারী ভাবে রণা-বেনের কোন উদ্যোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারী ভাবে তদারকির জন্য এখানে একজন লোক রাখার দাবী এলাকাবাসীর।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের জানাজা নামাজ পড়ান ঈমাম মাওলানা হাবিবুলাহ বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ সহ এখানে ৭ বীরের কবর দেওয়া আছে। এসব বীরদের জানাজা নামাজ ও দাফন আমি নিজে হাতে করে দিয়েছি। একজন পাহারাদার নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন জায়গাটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং মাঝখান দিয়ে পথ বন্ধ করে দেওয়া হলে, তাহলে কবর ও স্মৃতিস্তম্ভের পবিত্রতা রা পাবে।

শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের মাজারের ঠিকমত সংরণ হয়না। নোংড়া পরিবেশটা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই মাজারকে সংরণের জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। এখানে একটি বসার ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন। চারিদিক থেকে ওয়াল দিয়ে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সীমান্তের অজপাড়া গা এ কাশিপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ সহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মাজারশালা গুলি সরকারী ভাবে সংরণ করে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করা হলে আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা জানতে পারবে দেশ স্বাধীনের ইতিহাস, এমনটিই আশা করছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।