২২ দিন পর ভোলার বাজারে ইলিশ

অাকতারুজ্জামান সুজন, ভোলা প্রতিনিধি: ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শেষ হয়েছে। তাই ২২ দিন পরে ভোলার বাজারে ইলিশ উঠতে শুরু করেছে। জেলেদের জালে ধরা পড়া ৬০ ভাগ মাছের পেটে এখন ডিম নেই। আর মাছের আকার গড়ে ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা ২৮ অক্টোবর মধ্য রাতে শেষ হয়। এই ২২ দিনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে নদীতে ইলিশ আহরনের দায়ে ভোলার ৭ উপজেলার ৪১৮ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২৩০ জেলের কাছ থেকে ৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ৩ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করাসহ ৫ লাখ ৯১ হাজার মিটার জাল আটক করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ইলিশ সংক্ষণ অভিযান শেষ হওয়ার পরেও ভোলায় জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে রুপালি ইলিশ। এ কারণে ভোলার জেলেদের মধ্যে কিছুটা হলেও দেখা দিয়েছে খুশির আমেজ। আর এই ইলিশ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সরগরম মেঘনা ও তেতুলিয়া তীরবর্তী মাছের আড়ৎগুলো।

ভোলার বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, নদী থেকে ঘাটে ভিড়ছে শত শত ট্রলার ও নৌকা। জেলেদের আহরণ করা মাছ আড়তে তুলে ডাক দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দামে সেসব মাছ কিনে নিচ্ছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেপারিরা। এরপর তা ঝুড়িতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। জেলেদের হাত থেকে আড়ৎদার, সেখান থেকে পাইকার এবং বেপারিদের হাত ঘুরে এসব মাছ চলে যাচ্ছে ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল, যশোরসহ দেশের বড় বড় আড়তে।

দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকার পর উসাহী জেলেদের বসে থাকার বিন্দুমাত্র সময় নেই। সবাই ছুটছেন মাছ শিকারের জন্য নদী ও সাগরে। দৌলতখান এলাকার জেলে মো. রফিক বলেন, অবরোধের পরেও নদীতে মাছ ধরা পড়ায় খুব ভালো লাগছে। সকালে ৩ ঝুড়ি মাছ আড়তে বিক্রি করেছি। তজুমদ্দিনের জেলে কামাল জানান, অবরোধের কারনে এতদিন নদীতে মাছ ধরতে পারি নাই, তাই আমরা অনেক হতাশার মধ্যে ছিলাম। অনেক ঋণ হয়েছে। আশা করি এবার মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

মনপুরার তালতলা স্লুইসঘাটের আড়দার আলহাজ মো. ইউসুফ জানান, জেলেরা এই ২২ দিন অলস সময় কাটাত। এখন বসে থাকার সময় নেই। কারণ, ইলিশ ধরা পড়ায় মস্যজীবীদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। নতুন বাজারের মস্য ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন কাজী ও সুরোজ মিয়া বলেন, সরকারের ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম জেলায় কঠোরভাবে পালন হওয়ায় সব ধরনের ইলিশ আমদানি বন্ধ ছিল। তাই দীর্ঘ বিরতির পর ইলিশ শিকার শুরু হওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। পাশাপাশি পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় তাদের লাভও ভালো হচ্ছে।

জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতি’র সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর জেলেরা এখন মাছ ধরায় ব্যস্ত। জালেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ঘাটগুলোতে শত শত কেজি মাছ আসতে শুরু করেছে। আর অনেকদিন পর ইলিশের বাজার শুরু হওয়ায় পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। ভোলা সদর উপজেলা সিনিয়র মস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, জাটকা ধরা বন্ধ ও মস্য প্রজননের সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় উন্নয়নে আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে।

ভোলা জেলা মস্য কর্মকর্তা মোঃ আহসান হাসিব খান বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এর উপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ বছর সকলের প্রচেষ্টায় ইলিশ রক্ষা করা গছে। ফলে আগামী দিনে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।