কুমিল্লায় চেয়ারম্যান কর্তৃক ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষিত

স্টাফ রিপোর্টারঃ লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, প্রভাতী ইন্সুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান, লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র, লাকসাম উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, ভাইয়া গ্রুপের পরিচালক, ভাইয়া অটো রাইস মিলের মালিক ও লাকসাম জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজির আহমদের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দিনভর আটক রেখে ধর্ষণের ঘটনা ১০ লক্ষ টাকায় রফাদফা করার অভিযোগ উঠেছে।

সাংবাদিক, পুলিশ, হাসপাতালের নার্স, মেয়ের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাথী নামের এক পতিতা সরবরাহকারী গত ১৭ অক্টোবর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের কনকশ্রী মধ্যমপাড়াস্থ আনন্দ স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী পপি (১১/ছদ্মনাম) কে জামাকাপড় কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাকসাম নশরতপুরস্থ ভাইয়া গ্রুপের রাইস মিলের মালিক আলহাজ্ব মজির আহমেদের গোপনীয় কক্ষে নিয়ে যায়। বেলা ১১টায় চেয়ারম্যান মজির আহমেদ আসে নিজ কক্ষে।

মজিরের কাছে পপিকে রেখে চলে যায় সাথী। দিনভর অবুঝ পপিকে ধর্ষণ করে লম্পট মজির। একপর্যায়ে নাবালিকা পপি রক্তাক্ত ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাক্ষনিক লাকসামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন নার্স কে ডেকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিসা দেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে বিকালে পপিকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বুধবার রাতে পুনরায় পপি’র রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

কনকশ্রী ওয়ার্ড মেম্বার সাইদুল ইসলাম তিতু ও পপি’র স্বজনরা বৃহস্পতিবার সকালে তাকে লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ গোপনীয়তা রক্ষা করতে তাকে হাসপাতালের ৬ষ্ঠ তলায় চিকিসা দেয়। কিন্তু লাকসামে কর্মরত সাংবাদিকরা ভিড়তে থাকলে বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে ইউপি মেম্বার সাইদুল ইসলাম তিতু’র হেফাজতে কুমিল্লায় প্রেরণ করা হয়। এখন পর্যন্ত পপি ওই মেম্বারের হেফাজতেই আছে বলে একাধিক সূত্র দাবী করেছে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শুক্রবার সকালে ভাইয়া গ্রুপের মোস্তফা কামাল, পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম, ইউপি মেম্বার সাইদুল তিতু ও পপি’র পরিবারসহ স্বজনরা গোপনীয়ভাবে এক সমঝোতা বৈঠকে বসে। সেখানে পপি’র পরিবারকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাইয়া গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, মেয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করতে মজির সাহেব থেকে নগদ ১০ লক্ষ টাকা নিছে মোস্তফা সাহেব। কিন্তু পেরুলের চেয়ারম্যান সফিক, মেম্বার তিতু ও আওয়ামীলীগ নেতা ডালিমের সাথে কথা বলার পর তিনি সিদ্ধান্ত পরির্বতন করে মেয়ের পরিবারকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

লাকসামস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স নাম প্রকাশ না করে বলেন, মেয়েটির গোপনাঙ্গে ৬টি সেলাই করতে হয়েছে। তবে মেয়েটি আশংকামুক্ত। ক্ষোভ ও ঘৃনা প্রকাশ করে ওই নার্স সাংবাদিকদের আরো বলেন, চাকরী রক্ষার্থে চেয়ারম্যানের পছন্দমত মনোরঞ্জনে বাধ্য এ হাসপাতালের নার্স ও আয়ারা। একজন ছাড়া সব নার্সরাই গোপনীয় বাসায় যাওয়া আসা করে। সুন্দরী মেয়েদের মা ডেকেও অনৈতিক সর্ম্পক গড়ে তোলার নজির রয়েছে। পেরুলের নাতনী ও সালেহা আপার কথা লাকসামের সাবাই জানে। এতোকিছুর পরেও তিনি ছোট্ট মেয়েটিকে কিভাবে নষ্ট করলো?

মেয়ের বাবা মনির হোসেন বলেন, আমগো মেম্বার বলেছে কাউকে কিছু না বলতে। আমরা ১০ লক্ষ টাকা চাইছি, কিন্তু তিতু মেম্বার বলেছে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায় মেনে যেতে। তবে আমার নাবালিকা মেয়ের জীবন যে নষ্ট করেছে তার বিচার পরকালে হলেও হবে। এবিষয়ে বিএনপিনেতা মজির আহমদের মোবাইলে (০১৭১১-৭২০৯০৫) বার বার কল করেও বক্তব্য জানা যায়নি।