কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ – কৃষি মন্ত্রণালয়

বর্তমান সরকার দেশের সকল মানুষের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে শস্য বহুমূখীকরণ, উন্নত ও আধুনিক কলাকৌশল অবলম্বন, বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত প্রতিস্থাপন জরুরী। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজনযোগ্য প্রতিকূলতাসহিষ্ণু বিভিন্ন ফসল ও ফসলের জাত আবাদ সম্প্রসারণ করা অপরিহার্য। এলক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কৃষি মন্ত্রণালয় ১১টি ফসল চাষের জন্য দেশের সকল জেলাসমূহের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা প্রদানের জন্য কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আজ তার মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে খরিপ-২ ও রবি /২০১৮-২০১৯ মৌসুমের কৃষি প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত প্রেসব্রিফিং এসব কথা বলেন। কৃষি মন্ত্রী বলেন, বর্তমান রবি/২০১৮-১৯ মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটিবেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগও পরবর্তী খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল উপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চলতি ২০১৮-১৯অর্থবছরে ৬৪টি জেলায় ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯ শত ৭০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৭৯ কোটি ৯৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৪ শত ৯৫ টাকার বীজ ডিএপি ও এমওপি সার প্রদান করা হচ্ছে। প্রণোদনার মাধ্যমে পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমির জন্য রয়েছে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি)।

শস্যবহুমূখীকরণের মাধ্যমে দেশের মানুষের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা মিটানো। বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিক্ষয়, অনাবৃষ্টি, খরা, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, ঘনকুয়াশাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষক সমাজকে অভ্যস্ত করে তোলা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে কৃষকগণকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা। দেশের বিভিন্ন জেলায় পতিত ও সাময়িক পতিত জমি আবাদের আওতায় এনে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা।

কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা। নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের সাথে কৃষককে পরিচয় করিয়ে দেয়া। উচ্চ মূল্য ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা। সর্বোপরি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে কৃষকগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সুসংহত করর জন্য গম, ভূট্টা,সরিষা, চিনা বাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটি বেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগ, গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল আবাদে কৃষকদের উসাহিত করণ; ফসলের আবাদ এলাকা বৃদ্ধি ; হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি, দানাশস্য এবং ডাল, তেল ও সবজী জাতীয় ফসলের উপাদন বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া জন্য এই প্রণোদনা কার্যক্রম বলে উল্লেখ্য করেন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

উল্লেখ্য, গম এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি গম বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন ; এতে সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ১ হাজার ৯ শত ৬৫ টাকা। ভূট্টা’র ক্ষেত্রে ১ বিঘা জমির জন্য ২ কেজি ভূট্টা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩ শত ২ টাকা। সরিষা এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ১ কেজি সরিষা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন।

সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৭শত ৮৬ টাকা। চীনাবাদাম এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ১০ কেজি চীনাবাদাম বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫ শত ৬৩ টাকা। গ্রীষ্মকালীন তিল এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ১ কেজি তিল বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৭ শত ৯২ টাকা।
গ্রীষ্মকালীন মুগ এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি মুগ বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার পাবেন।

সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৯ শত ৩৫ টাকা। খেসারী এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৮ কেজি খেসারী বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৯ শত ৭৬ টাকা। ফেলন এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৭ কেজি ফেলন বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৪ টাকা। বিটি বেগুন এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২০ গ্রাম বিটি বেগুন বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৯ শত ৯৫ টাকা। বোরো এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ১ হাজার ২ টাকা। শীতকালীন মুগ এর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি মুগ বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার পাবেন। সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৯ শত ৩৫ টাকা।

প্রেসব্রিফিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিরুজামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও উপকরণ অনুবিভাগ) মোঃ সিরাজুল হায়দার, এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি অনুবিভাগ)মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) সন কুমার সাহা, বিএডিসি’র চেয়ারম্যান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচারক ও বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ব্ধতন র্ককর্তাবৃন্দ।