চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মহিমা ক্লিনিকে ভুল অপারেশনের দুদিন পর প্রসুতির মৃত্যু

মামুন মোল্লা, চুয়াডাঙ্গাঃ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা শহরের ব্যাঙের ছাতার মত বিস্তার করা ক্লিনিক গুলোয় কর্তৃপক্ষের সুনজরদারী না থাকার কারনে দিনে দিনে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে জীবননগর উপজেলার বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে ঠিক মত ডাক্তার থাকে না। অনভিজ্ঞ নার্স ও স্টাফদের দিয়ে পরিচালিত হয় এই ক্লিনিকগুলো। এখানে যারা সার্জিক্যাল ডাক্তার না তারাই বিভিন্ন সার্জারী অপারেশন করে থাকেন। আর তার ফলেই অধিকাংশ সময়ে রোগী সাধারন কঠিন দূর্ভোগে পড়ছে। ঘটছে মৃত্যুর মত ভয়ঙ্কর দূর্ঘটনা।

জীবননগর মহিমা ক্লিনিকে সরেজমিনে দেখা গেছে অতিরিক্ত বেডে রোগী ভর্তি হচ্ছে। অদক্ষ নার্সদের দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। আবার রোগীদের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। জীবননগর রাজনগর পাড়ার সাগরের স্ত্রী চম্পার দ্বীতীয় সন্তান প্রসবের বেদনায় মহিমা ক্লিনিকে ভর্তি হয়। গত সোমবার (২৯ অক্টোবর) তার সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে চম্পা ছেলে সন্তান প্রসাব করে। আপারেশনের পর থেকে চম্পাকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায় নি।

বুধবার দুপুরে চম্পার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে এক পর্যায়ে চম্পাকে আর বাঁচানো যায়নি। তার মৃত্যুর খবর শুনে মহিমা ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম গা ঢাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে চম্পার সিজার করেছন ডা মাহমুদার সাথে কথা বল‌ে জানা গেছে অপারেশনের পর থেকেই চম্পা শ্বাস কষ্ট জনিত রোগে ভুগছিল। এ কারনে হয়তো তার মৃত্যু হতে পারে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

নিহত প্রসুতির পারিবারিক সুত্র জানান, জীবননগর উপজেলার পৌর এলাকার রাজনগর গ্রামের সাগর হোসেনের স্ত্রী চম্পা খাতুনকে (২০) সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য সোমবার বিকালে শহরের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড নার্সিং হোমে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে তাকে অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করানো হয়। অপারেশনের পর রাতে প্রসুতি চম্পা খাতুন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।

এ অবস্থায় বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে প্রসুতি চম্পা মারাত্মক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকের দু’জন কর্মচারির মাধ্যমে চম্পাকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্রে পাঠিয়ে দিলে সেখানে কর্মরত ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষনা করলে পরিবারের সদস্যরা হতবাক হয়ে পড়েন। নিহত গৃহবধূ চম্পার শ্বশুর পাংখী মিয়া বলেন, আমার বউমাকে সোমবার বিকালে ভর্তি করি। আমাদের পক্ষ থেকে কোন অবহেলা ছিল না।

কিন্তু ডাক্তারের ভুল চিকিসা আর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পরবর্তীতে বউমা চম্পা মারা গেছে। ক্লিনিকেই মারা গেলেও কৌশলে রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ক্লিনিক মালিক ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিল। মহিমা ক্লিনিকের অভিযুক্ত ডা.মাহমুদা খাতুন বলেন,প্রসুতি চম্পা খাতুনকে আমিই অপারেশন করেছিলাম। অপারেশনের পর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে বিভিন্ন চিকিসক দিয়ে তাকে সুস্থ্য করার চেষ্টা করি। তবে চম্পা খাতুনের এ্যাজমা রোগ ছিল যা আমাদের জানা ছিল না।

তবে আমি এখন চুয়াডাঙ্গায় আছি। রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ গনি মিয়া বলেন, ঘটনার ব্যাপারে ডাক্তারের ভুল চিকিসা আর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষেও অবহেলায় প্রসুতি মারা গেছে মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্ত পুর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।