জামিনে কারামুক্ত চবি শিক্ষক মাইদুল

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। হাই কোর্টের দ্বৈতবে ২০ দিন আগে মাইদুলের জামিনের আদেশ দিলেও তা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের কারাগারে না পৌঁছানোয় এতোদিন তিনি ছাড়া পাননি।

জামিনের আদেশের অনুলিপি আগের দিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার সকালে তিনি মুক্তি পান। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, সোমবার রাতে উচ্চ আদালতের জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর তা যাচাই-বাছাই করে মাইদুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

মাইদুলের আইনজীবী ভুলন লাল ভৌমিক বলেন, হাই কোর্টের জামিন আদেশ গতকাল এসে পৌঁছে। বেইল বন্ড জমা দিতে গতকাল সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই আজ সকালে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তির পর মাইদুল বলেন, মুক্তি পেয়ে আমি সাময়িকভাবে খুশি। কিন্তু পরিপূর্ণ আনন্দিত নই। মতপ্রকাশের জন্য এখনো অনেকে কারাগারে আছেন। রাষ্ট্র যেভাবে মুক্তবুদ্ধির চোয়ালে আঘাত হানছে তা কাম্য নয়। মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, সেক্যুলারিজম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়। তাহলে মুক্তচিন্তার প্রকাশে কেউ বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।

উচ্চ আদালতে নির্দেশে জামিন পাওয়ার পর প্রিয় ক্যাম্পাসে ফেরার আকুতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ক্লাসে ফিরতে চাই। দীর্ঘদিন ক্লাস নিতে পারি না। আবার ক্লাস নিতে পারব সেজন্যই পুলকিত।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুলাই মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাটহাজারি থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখারুল ইসলাম। কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ায় মাইদুল ইসলাম এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।

তাদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ‘হুমকির’ কারণে ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টরের কাছে আবেদন করেছিলেন শিক্ষক মাইদুল ইসলাম। ওই অবস্থায় গত ৬ অগাস্ট হাই কোর্ট থেকে তিনি আগাম জামিন নেন।

হাই কোর্টের দেওয়া আট সপ্তাহের জামিন শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মাইদুল ইসলাম। আদালত তা নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর ৯ অক্টোবর উচ্চ আদালত শিক্ষক মাইদুলকে ছয় মাসের জামিন দেয়।