বিএনসিসি’র ক্যাডেটদের নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে হবে-ইবি ভিসি

ইবি প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনসিসি’র সদস্যদের ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য। বিএনসিসি সদস্যরা সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হয়ে শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠনে সামরিক শক্তির পাশাপাশি সহায়ক শক্তি হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি’র বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী সদর দপ্তর সুন্দরবন রেজিমেন্ট, খুলনার আওতাধীন বিএনসিসির ২৪ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পিং (বিসি) ০৪/২০১৮ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী একথা বলেন।

তিনি বলেন, যারা বিএনসিসি’র সাথে জড়িত আছেন, দেশের মানুষকে তাদের শৃঙ্খলা শিক্ষা দিতে হবে। দেশের আপৎকালীন সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, একুশ শতকের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদেরকে কমিউনিটি সার্ভিসিং ও লাইফলং সার্ভিসিং এর উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি একজন মনীষীর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, দেশ তোমাদেরকে কি দিল সেটি চিন্তা করবে না বরং, তোমার চিন্তা হতে হবে তুমি দেশের জন্য কি করছো। তিনি বিএনসিসি’র প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে যাতে তোমরা নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে পারো ও দেশের মানুষের প্রতি সেবার মানসিকতা গড়ে তুলতে পারো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভিসি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসি’র প্রতিষ্ঠাতা ২৪ ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে: প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুুর রহমান (বিটিএফও) বলেন, তোমরা এখানে উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট সদস্যবৃন্দ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারোনি, কিন্তু তোমাদের আজ সেই সুযোগ এসেছে যে, আপকালীন সময়ে দেশের প্রয়োজনে তোমরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে নৈতিক চরিত্র ও নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে পারবে।

তিনি উপস্থিত ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে সামরিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে। তোমাকে সব সময় মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকতে হবে, লিডার হতে হবে তোমাদের দক্ষতায়। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে তোমরা জীবনযুদ্ধে বেশি সফলতা অর্জন করতে পারবে কারণ তোমরা প্রশিক্ষিত। তিনি আরো বলেন, তোমাদের এমনভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে অন্যদের থেকে তোমাদের আলাদাভাবে চেনা যায়।

অপর বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রেজারার প্রফেসর ড. সেলিম তোহা বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতার সাথে রাষ্ট্র ও সমাজকে সেবা দানের বিষয়ে বিএনসিসি’র সদস্যদের কাজের ভুমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সব থেকে বড় সমাবর্তনের শৃঙ্খলারক্ষাসহ অর্পিত প্রতিটি দায়িত্ব বিএনসিসির সদস্যরা নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে। তিনি আরো বলেন, দেশ আজ সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হিসাবে আমাদের সকলের মধ্যে মানবিক মুল্যবোধ, মানবিকতা ও সাংস্কৃতিকবোধের উন্মেষ ঘটাতে হবে।

তিনি প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের নিজেদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে যাতে তোমাদের বন্ধুরা তোমাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়। তিনি আরো বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বুকভরা দেশপ্রেম নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই দেশপ্রেমের শ্লোগান তোমাদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং দুর্যোগ ও আপকালীন সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন সদর দপ্তর সুন্দরবন রেজিমেন্ট, খুলনার আওতাধীন বিএনসিসির ২৪ ব্যাটালিয়ন এর এ্যাডজুটেন্ট ও প্রশিক্ষক মেজর নাজমুল হক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ নেছার উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবর রহমান, ছাত্র-উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোঃ রেজওয়ানুল ইসলাম, বিএনসিসি’র প্রধান সমন্বয়কারী কর্মকর্তা প্রফেসর ড. মোহাঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, রেজিস্ট্রার (ভারঃ) এস এম আব্দুল লতিফসহ বিএনসিসি’র অফিসার, পিইউও, টিইউও, সামরিক প্রশিক্ষকবৃন্দ।

এছাড়াও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিএনসিসির ২৪ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ১৮ টি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭০ জন (পুরুষ ও মহিলা) ক্যাডেটবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে সুশৃঙ্খল বিএনসিসি’র সদস্যবৃন্দ ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুুর রহমান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. সেলিম তোহাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। উল্লেখ্য, ১লা অক্টোবর হতে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনসিসির ২৪ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হবে।