রেললাইনে মাছ বাজার

রামিম হাসান, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের বারোবাজারে ট্রেন লাইনের উপরেই বসে মাছের বড় বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন গাড়ি ভরে মাছ চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে বেচাকেনা। সকাল থেকে শুরু হয় মাছ বিক্রি। বেলা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রেনলাইনের উপরেই বসে যায় বাজার। ট্রেন লাইনের দু’ধার দিয়ে অল্প কিছু জমিতে গড়ে উঠা মাছ বাজারটি ক্রমেই বড় মোকামে পরিণত হওয়ায় ট্রেন লাইনের উপরেই বসে মাছ বাজারটি।

ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে মাছের আড় থাকায় রাস্তা থেকে কিছুই দেখা যায় না। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট ভোর সাড়ে ৩টার দিকে একটি বরযাত্রীর বাসের সাথে ট্রেনের সংঘর্ষে ১২ জন নিহত হন এবং অন্তত ৪০ জন আহত হন। আড়তে মাছ বিক্রি করতে এসে ট্রেনে কেটে একাধিক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘ ৭৮ বছর রেললাইনে বসছে দক্ষিণা লের দ্বিতীয় বৃহত্তম বারোবাজার মাছ বাজারটি। মাছ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, নিরাপদ স্থানে বাজারটি স্থানান্তরের জন্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি মহলে ধর্ণা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

বারবাজারের একাধিক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ১৯৩৬ সালে তাদের এলাকার হাজের আলী বিশ্বাসসহ ৫/৬ জন ব্যবসায়ী বারোবাজারের রেল স্টেশনের পাশেই লাইনের দু’ধার দিয়ে ছোট ছোট ঘর করে মাছ বেচাকেনা শুরু করেন। সে সময় মালামাল পরিবহনের সুবিধার জন্য রেলওয়ের জায়গায় মাছ বাজার বসানো হলেও পরবর্তীতে রেলওয়ের কাছ থেকে তারা জায়গা বন্দোবস্ত নেন। সে সময় থেকেই এ স্থানে বাজারটি চলে আসছে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, আগের দিনে আড়তের সংখ্যা কম থাকায় রেল লাইনের পাশে হলেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আড়ৎ ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সকাল-বিকালে ক্রেতা বিক্রেতাদের থাকে চরম ভীড়। রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। ক্রেতা বিক্রেতারা লাইনের উপর দিয়ে এপাশ ওপাশ চলাফেরা করেন। হঠাৎ ট্রেন এসে গেলে বিপদের শেষ থাকে না। ব্যবসায়ীরা জানালেন, আড়ৎ মালিকদের রেলওয়ের নিকট থেকে লাইনের দুই ধারের ৪৯ শতক জমি বন্দোবস্ত নেওয়া আছে। কিন্তু বাজারের কেনাবেচা ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ায় বেশি জমির দরকার। প্রয়োজন মতো জায়গা না পাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে বাজারে মাছ বিক্রি করতে এসে রেল লাইনের উপর বসতে বাধ্য হচ্ছেন।

তাছাড়া লাইনের দুইপাশের আড়তগুলোর পিছনে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। ফলে আড়তগুলো পিছিয়ে নেবারও সুযোগ নেই।
পাশের মোবারকগঞ্জ রেল ষ্টেশনের মাষ্টার শাহজাহান খান জানান, খুলনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২শ ৪৭ কিলোমিটার ট্রেন লাইন রয়েছে। এ লাইন দিয়ে প্রতিদিন আন্তনগর আপে ৬টি, ডাউনে ৬টি, আর মেইল ট্রেন আপে ৩টি এবং ডাউনে ৩টি চলাচল করে। এছাড়াও রয়েছে মালবাহী ট্রেনের আসা-যাওয়া। ফলে লাইনটি সব সময় থাকে ব্যস্ত।

বাজারটি স্থানান্তর দরকার বলে তিনি মনে করেন। কালীগঞ্জ সিনিয়র উপজেলা মস কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মো. সাইদুর রহমান রেজা জানান, এভাবে ঝুঁকি নিয়ে মাছ বাজার বাসানো সকলের জন্য ক্ষতিকর। আমরা জানিয়েছি, অন্যত্র নির্ধারিত জায়গা দিলে পরিবেশ সম্মত আড়ত তৈরী করে দিব।