শার্শায় বাণিজ্যকভাবে শুরু ড্রাগন চাষ

জয়নাল আবেদীন, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ যশোরের শার্শা উপজেলায় ‘ডায়াবেটিস’ ওষুধ খ্যাত ভেষজগুণ সমৃদ্ধ ‘ড্রাগন’ ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী সালতা-ফুলসারা গ্রামের রাসেদুল ইসলাম ও আল হুসাইন দুই ভাই নয় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করে আজ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছেন। তাদের দেখাদেখি উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে বলে জানান শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র।

উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে তিনজন চাষি ড্রাগন চাষ করলেও ফসলি জমি কিম্বা বাসাবাড়ির ছাদে অন্তত ২০০ সৌখিন চাষি ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ড্রাগন চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র পরিচর্যা করেই গাছে ফল আনা যায়। ১৪ মাস বয়স হওয়ার পর গাছে ফল আসতে শুরু করে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। বাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি ফল বাজারে চার’শ থেকে সাড়ে চার’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাষি আল হুসাইন বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করতে সর্বমোট খরচ হয়েছে ১২লাখ টাকা।বছর শেষে ৩৫ লাখ টাকা ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি। চার বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন রাসেদুল। তিনি বলেন, পরীক্ষামুলক ভাবে দুই বছর আগে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এবছর ফল আসতে শুরু করেছে। আজ আমি স্বাবলম্বী। এটি একটি লাভজনক চাষ। তবে প্রথম অবস্থায় টাকা পয়সা খরচ একটু বেশি হওয়ায় সরকারি সহযোগিতা পেলে এচাষ দ্রুত বিস্তার লাভ করবে বলে মনে করেন রাসেদুল।

বানিজ্যিক ভাবে বাগআঁচড়ার বসতপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর অক্টোবরে ড্রাগনের কাটিং লাগানো হলে মার্চ এপ্রিলে ফুল আসা শুরু করে। এক বছর পর ফল পুরোপুরি বিক্রি করা যায়। একটি গাছ এক নাগাড়ে ৩০ বছর ফল দেয় বলে জানান মনিরুজ্জামান। রাসেদুল বলেন, ঢাকার বাজারে ড্রাগনের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। বাজারটি এখনো বিদেশী ফলের উপর নির্ভরশীল। কারওরান বাজারের মার্কেটে এবছরের প্রথমে ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি প্রতিকেজি ৭০০ টাকা দরে। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকায়।

একজন সৌখিন ড্রাগন চাষি টেংরা গ্রামের জাকির হাসান শান্ত বলেন,তিন বছর আগে বাড়ির ছাদে আমি ড্রাগন গাছ লাগায়। গত বছর থেকে পুরোপুরি ফল আসতে শুরু করেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই শুধু পরিচর্যা করে ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। সিমেন্টের তৈরি পিলারের উপরে টায়ার বেঁধে দিলে তাতে জড়িয়ে ওঠে গাছগুলি ফল দেওয়া শুরু করে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুখেন্দু কুমার মজুমদার জানান, ড্রাগন চাষে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের পুরোপুরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের পরামর্শের ফলে চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ওদের দেখাদেখি এলাকার অনেক চাষি এ ড্রাগন ফলচাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন বলে জানান তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র জানান, শুরু হয়েছে ড্রাগন চাষ। প্রতি বিঘা জমিতে ১ থেকে ৩ লাখ টাকার উপরে লাভ করা সম্ভব। ড্রাগন চাষে নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ চাষিদের প্রশিক্ষণ উসাহ ও পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। আগামীতে চাষিদের আরো সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো হবে বলে জানান নারায়ন চন্দ্র।

নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহম্মেদ বলেন, দেশে অপ্রচলিত একটি ফল ড্রাগন। ক্যাকটাস গোত্রের এই গাছ দেখে সবাই এটাকে ‘সবুজ ক্যাকটাস’ বলে মনে করে। মধ্য আমেরিকায় এই ফল বেশি পাওয়া যায়। তবে এশিয়ার অনেক দেশে এখন বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে। ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এটি খুব উপকারি ফল। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে তাই শরীরের চর্বি ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর কাজে এই ফলটি ব্যবহার হয়।