হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি

রিজভী রাহাত, বান্দরবান: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা ইউনিয়নের ইন্দুরমুখে সংগঠিত গরু ব্যবসায়ী হেলাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয় আসামী খুনের দায় স্বীকার করে বুধবার বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবান্দবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় এজাহারভূক্ত আরো ২ জনকে বুধবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার গহীন পাহাড়ী এলাকায় সংগঠিত হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতারে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দক্ষতায় খুশী হয়েছেন স্থানীয়রা।

আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিক উল্লাহ্ জানান, গরু ব্যবসার টাকা লুটের ঘটনায় খুন হয় ব্যবসায়ী যুবক হেলাল। গত সোমবার আলীকদম জোনের সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ হেলালের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলটি অতি দুর্গম। নদীপথেই দুরত্ব আনুমানিক ৬০ কিলোমিটার। তারপরও ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতা লাশ খুঁজে পাওয়া যায় এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৭ জনকে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এরমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় মারান কমাণ্ডার নামে একজনকে ছেড়ে দিয়ে ৬ জনকে বুধবার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ ৬ জনের প্রত্যেকেই খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। অপরদিকে, এজাহারভূক্ত আরো দুইজনকে বুধবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে দুলাল নামে এক আসামীকে বৃহস্পতিবার বান্দরবান সদরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। গত ১৫ অক্টোবর নিহতের বড় ভাই মোঃ ইলিয়াছ এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেন।

এজাহারে প্রকাশ, খুন হওয়া মো. হেলাল কিছুদিন আগে একটি গরু কেনা জন্য আসামী মেনছুক ম্রো, মাংইন ম্রো, ও দুলালের সাথে পোয়ামুহুরী এলাকায় যায়। সেখানে গরুর দাম নির্ধারণে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। পরে হেলাল টাকা নিয়ে এসে গরু কিনবে বলে চলে আসে। গত ১ অক্টোবর হেলাল গরু কেনা টাকা নিয়ে আলীকদমের নয়াপাড়াস্থ তার বাড়ি থেকে পোয়ামুহুরী বাজারে যায়। খুনীদের মধ্যে মেনছুক ম্রো, গরু কেনা কথা বলে হেলালকে গত ৬ অক্টোবর ইন্দুরমুখে নিয়ে যায়। ওইদিন সকাল ৯টার থেকে যেকোন সময়ই হেলাল হত্যার শিকার হয়।

এজাহারে প্রকাশ, হত্যাকাণ্ডের সময় আসামী রাংফাং ম্রো‘র ধারালো অস্ত্রের কোপে হেলালের লিঙ্গসহ অন্ডকোষ কেটে যায়। এরপর আসামী লুহোব ম্রো, মেনতা ম্রো, কংপং ম্রো, মাংরাং ম্রো, মাংঅং ম্রোসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন হেলালকে গলাকেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে খুন করে তার ব্যাগে থাকা ৩০ হাজার টাকা লুট করে। খুনীদের মধ্যে রাংফাং ম্রো এখনো পলাতক রয়েছে। তবে এজাহারভূক্ত ৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

অভিযুক্ত ৯ আসামীর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন- মেনচুক ম্রো (১৮), মাংইন ম্রো (২৬), লোহব ম্রো (৪৫), মেনতা ম্রো (২৪), কংপং ম্রো (৪০), মাংরো ম্রো (২৫), মাংঅং ম্রো (২২) ও দুলাল কান্তি দাশ (৪৫)। এরমধ্যে ১নম্বর আসামী রাংফাং ম্রো এখনো পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া লোহব ম্রো বিলুপ্ত হওয়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেসি পার্টি (এমএনপি’র) একাংশের প্রধান।

লামা প্রেসক্লাব সেক্রেটারী মো. কামরুজ্জামান বলেন, হেলাল হত্যাকান্ড হয়েছে অতিদুর্গম এলাকায়। তারপরও সেনাবাহিনী ও পুলিশ লাশ উদ্ধারসহ খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে সাফল্য দেখিয়েছে। লাশ উদ্ধার পরবর্তী পাহাড়ি-বাঙ্গালীর সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। আলীকদম জোন কমাণ্ডার ও থানার ওসি রফিক উল্লাহ্র বিচক্ষণতায় তা সম্ভব হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
Attachments area