গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর কালনা ফেরিঘাটে পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর মধুমতি নদীর কালনা ফেরী ঘাটে যানবাহন চলাচলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দুই থেকে তিনগুন বেশি টাকা ফেরী পারাপারে ঘাট মালিকের আদায়কারীরা আদায় করছে বলে যানবাহন চালকরা অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়াও ঘাটে সিরিয়ালের নামে অবৈধ ভাবে গাড়ি থেকে টাকা নেয়া হয় বলেও চালকরা জানান। কালনা ঘাটে মধুমতি নদী পারাপারে যাত্রী প্রতি ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যানবাহন ও যাত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে না।

প্রতিদিন এ ফেরী ঘাটে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শ’শ’ যানবাহন ও হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হচ্ছে। যানবাহন ও যাত্রীদের জিম্মি করেই প্রতিদিন হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মধুমতি নদীর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা ও নড়াইল জেলার লোহগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে এ ফেরী ঘাটের অবস্থান।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ঠিকাদার এ কে এম মঞ্জুর হাসান ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় কালনা ফেরীঘাট চলতি বছর থেকে ৩ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে। গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ ট্রেইলার পারাপারে ৫৬৫ টাকা, হেভি ট্রাকে ১৫০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাকে ১২৫ টাকা, মিনি ট্রাকে ১১৫ টাকা, পাওয়ার টিলারে ৯০ টাকা, বড় বাসে ৬০ টাকা, মিনি বাসে ৩৫ টাকা, মাইক্রো বাসে ৪০ টাকা, পিকআপ, কভারেশন জীপে ৪০ টাকা, সিডানকার ২৫ টাকা, অটো রিক্সা, সিএনজিতে ১৫ টাকা, মোটর সাইকেল, ভ্যাান রিক্স্রা পারপারে ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে ফেরীঘাটে তালিকা টানিয়ে দিয়েছে।

নড়াইলের বাস চালক মো. রানা বলেন, আমাদের ৫২ সিটের বাস পারাপারে ফেরীর আদায়কারীরা ২১০ টাকা নিয়েছে। কোন রশিদ দেয়নি। এছাড়া সিরিয়ালের জন্য নড়াইল জেলার লোহগড়া উপজেলার কালনা পাড়ে আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা নেয়া হয়েছে। এখানে ফেরী ভাড়ার সরকারি তালিকা অনুসরণ করা হয়না। মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। ঘাট মালিক ও আদায়কারীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী তাই তারা যা খুশি তাই আদায় করছে।

মাইক্রোবাস চালক মো: ইলিয়াস হোসেন বলেন, ফেরী পারে আমার কাছ থেকে ৬০ টাকা নিয়েছে। এছাড়া সিরিয়ালে ২০ টাকা দিতে হয়েছে। এখানে আমাদের জিম্মি করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। পিকআপ চালক মো: মিরাজ হোসেন বলেন, পিকআপ পারাপারে ১৫০ টাকা নিয়েছে। সিরিয়ালে দিয়েছি ৫০ টাকা। এ ঘাটের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অরাজকতা বন্ধ হওয়া দরকার।

নড়াইলের লক্ষীপাশা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘাটে জনপ্রতি ঘাট মালিক তিন টাকা আদায় করেন। এ তিন টাকা নিয়ে ঘাট মালিকের নৌকায় ঘাট পার করে দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ঘাট মালিকের ঘাটে কোন নৌকা নেই। পারের জন্য মধুমতি নদীর মাঝির নৌকায় আরো ৩ থেকে ৫ টাকা গুনতে হয়। এ নদী পার হতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে কালনা ঘাটের আদায়কারী আঞ্জু মিয়া বলেন, ঘাট মালিক যে ভাবে টাকা আদায় করতে বলে আমরা সে ভাবেই করি। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। আমরা ঘাট মালিকের চাকর মাত্র। ঘাটের মাঝি মো: বাদশা মিয়া বলেন, এ ঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পার হন। এটি অত্যন্ত ব্যস্ত ঘাট। এখানে যাত্রী পারাপারের জন্য ঘাট মালিকের কোন নৌকা নেই। তাই যাত্রীরা ঘাটে ৩ টাকা দেয়ার পরও ৫ ভাড়া দিয়ে আমাদের নৌকায় পার হন। এ ঘাটে আমার মতো শতাধিক মাঝি যাত্রী পারাপার করে জীবন জীবিকা চালাচ্ছেন।

ঘাট মালিক এ কে এম মঞ্জুর হাসান ফেরী ও খেয়া পারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের অনেক যানবাহন এবং যাত্রীকে ফ্রি পারাপার করতে হয়। এটি পুষিয়ে নিতে কখনো কখনো সামান্য বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। দুই থেকে তিনগুন ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়। এখন থেকে ফেরী পারাপারে রশিদ দেয়া হবে। নড়াইল পাড়ে সিরিয়ালের টাকা নেয়া হয়। ওদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের গোপালগঞ্জের পাড়ে গাড়িতে কোন সিরিয়ালের টাকা নেয়া হয় না।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শরিফুল আলম বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জেনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।