বাদশা আলম, শেরপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে দুর্বৃত্তদের দেয়া বিষে মাছ নিধনের ফলে মৎস ব্যবসায়ী লিটনের ভবিষৎ অন্ধকার। ভাল নাম ফকর উদ্দিন। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ যাকে লিটন নামেই চিনে।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের মুসলিম পরিবারের শাহজাহান আলী ঘরে জন্ম নেয়া লিটনের বেড়ে ওঠা তার নিজ গ্রামেই। ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস করার পর বড় ভাই ইছানুর এর মাছের ব্যবসা দেখাশুনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। লেখাপড়ার পাশাপাশি বড় ভাইয়ের ব্যবসা দেখতে দেখতে নিজে হয়ে ওঠেন মাছ চাষে অনেক অভিজ্ঞ। তাই তিনি নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে নিজেই ৩টি পুকুর লিজ নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ ২০০৫ সালের গোড়ার দিকে। দেখতে দেখতে প্রায় ১৪ বছর পার করেছেন মাছ চাষ করে। শিক্ষা জীবনে স্নাতক পাশ করে চাকুরি না পেলেও,মাছ চাষে পেয়েছেন অনেক সফলতাও। বর্তমানে তার পুকুরের সংখ্যা ১০টি। শেরপুরের সফল যে কয়জন মাছ ব্যবসায়ি আছে তার মধ্যে লিটনও একজন।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় সোয়া ৬ একর আয়তনের তিনটি জলাশয় ৩বছরের জন্য লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। জলাশয় গুলোতে পাঙ্গাস, মনোসেক্স, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। মাছগুলো হয়েছিলও চোখে দেখার মত, আমন ধান কাটার মৌসুমে নবান্নের অনুষ্ঠানের মাছ বিক্রির আকাঙ্খায় অনেক আশায় বুক বেঁধে তার চোখে মুখে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের একটি রঙিন স্বপ্ন। কিন্ত গত ১২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়। হঠাৎ ছন্দপতন হয়ে এই স্বপ্নের অপমৃত্যু হয় গত ১২ নভেম্বর রাতে দুর্বৃত্তদের দেয়া কীটনাশক ভয়াবহ বিষে। রাতের আঁধারে কে বা কাহারা মাছ ভর্তি তিনটি পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে। এতে পুকুরের প্রায় সবগুলো মাছই মারা যায় এবং বিক্রির অনুপযোগী হয় পড়ে। এতে লিটনের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়ে স্বপ্নের গড়া মৎস্য ভান্ডারেই নেমে আসে বেদনার সুর। বড় ভাই ইছানুরের সাথে সাথেই মৎস্য ব্যবসায়ী লিটন ২০১৩ সালে জাতীয় মৎস সপ্তাহ উপলক্ষে মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদনের জন্য উপজেলার মধ্যে সফল মৎস চাষি পুরস্কারও চলে আসে তার কাছে।
মাছ চাষে সফলতা নিয়ে ব্যস্ত থাকা লিটনের ভাগ্যে হটাৎ করেই দূর্বৃত্তদের হানায় একেবারে পথে বসতে চলেছে এই সফল ব্যবসায়ী। স্বপ্ন হারানো ও সদা হাস্যেজ্জ্বল লিটনের কোন বাহ্যিক শক্র না থাকলেও তার মৎস্য ভান্ডারগুলোতে হঠাৎই দূর্বৃত্তদের হানায় নিজেকে সামলে নিয়ে সম্প্রতি শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। অন্যদিকে লিটনের এমন ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই ভাবিয়ে তুলছে অন্যসব মৎস্যচাষ ও ব্যবসায়ীদের। এ প্রসঙ্গে মৎস্যচাষী ফকর উদ্দিন আহমেদ লিটন বলেন, জানামতে আমার কোন শক্র নেই, তাহলে কেন এধরণের ক্ষতিহলো বুঝতে পারছিনা। তবে এ ক্ষতিতে আমার জমানো পুঁজি হারিয়ে দু’চোখে অন্ধকার দেখছি। অভিযোগ প্রাপ্তিতা স্বীকার করে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর বলেন, অজানা দুস্কৃতকারিদের তথ্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।