রাজশাহী-১ বিএনপিতে স্বামী-স্ত্রী যুদ্ধ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ

আলিফ হোসেন,তানোর প্রতিনিধিঃ রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) ভিআইপি এই সংসদীয় আসনে একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক ডাকমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও তার স্ত্রী আতা হক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর বুধবার তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তারা স্বামী-স্ত্রী একই সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এদিকে রাজশাহী-১ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে অনুপস্থিত থাকায় সাধারণের মধ্যে তার ইমেজ সঙ্কট ও তিনি অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন আবার তার স্ত্রী আতা হককে এই জনপদের মানুষ কখানো দেখেননি, এর পরেও তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জামায়াত এবং বিএনপির একাংশের নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের ভাষ্য, তবে কি বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট রয়েছে যে বির্তকিত হবার পরেও তাদের পরিবার থেকেই বিএনপির মনোনয়ন দিতে হবে তারা যদি নির্বাচন করবেন তাহলে এলাকায় এতোদিন আসেননি ও নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেননি কেন-? তারা কি হঠাৎ করে এসেই আওয়ামী লীগের হাইপ্রোফাইল-হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধূরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হতে পারবেন, না কি-? ব্যারিস্টার পরিবার নেতৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় পরাজিত হবেন এটা নিশ্চিত হয়েও ব্যারিস্টার পরিবার থেকেই এভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যাতে অন্তত্ব নেতৃত্বটা ব্যারিস্টার পরিবারের হাতছাড়া না হয়। এসব নেতাকর্মীরা বলছে, এবার অন্তত্ব এখানে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতিকে জামায়াতের প্রার্থী দেয়া যেতো তাহলে ঐক্যফ্রন্ট জোটের বাঁধন আরো শক্তিশালী হতে পারতো এটা না করায় জামায়াত এখন নিজেদের অস্থিত্ব ধরে রাখতে বিএনপিবিরোধী অবস্থান নিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ফলে এই জনপদের মানুষ আর ব্যারিস্টার পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ দেখতে চাই না তারা চায় কর্মী ও জনবান্ধব নেতৃত্ব যিনি বিপদের সময় নেতাকর্মীদের আগলে রাখবেন আতœগোপষ করবেন না।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, এটা তার নির্বাচনী কৌশল মনোনয়ন পেলেও আইনি জটিলতায় বাতিল বা নির্বাচনে প্রতিদন্দিতার অযোগ্য হবার আশঙ্কা থেকে তিনি এমনটি করেছেন। তারা বলেন, ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দলীয় মনোনয়ন জমা দেবার পরেও কোনো কারণে নির্বাচন কমিশনে তার প্রার্থী বাতিল হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় বিএনপিতে তার পরিবারের নেতৃত্ব হারানোর কোনো ঝুঁকি না তিনি তার স্ত্রীর নামেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের স্ত্রীর নামে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন ব্যারিস্টার আমিনুল এবার নির্বাচনে প্রতিদন্দিতা বরতে পারবে না। কারণ ব্যারিস্টার আমিনুলের দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখানোই তার পরিবারের সদস্যদের নামে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তানোর উপজেলা বিএনপির এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, ব্যারিস্টার আমিনুল সেতো সূখের পায়রা কখানো কোনো দলীয় কর্মসূচিতে থাকেন না আবার দলের দুর্দীনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্কও রাখেন না তাহলে কেনো তাকে নিয়ে আমাদের বার বার ভোট করতে হবে।

তার দাবি যে মানুষটি বছরের পর বছর কেবল এই জনপদের সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণাই করে গেছেন তাকে তো নেতা আর নেতৃত্বে নিয়ে আশা যায় না বরং এখানে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক ভাল আছি নেই ক্ষমতার দাপট, মিথ্যা মামলা-মোর্কদমা ও রাজনৈতিক হানাহানি, এসব বিবেচনায় ব্যারিস্টার আমিনুল প্রার্থী হলে বিএনপির বড় একটি অংশের ভোট বিরোধীদের বাক্সে যাবে। রাজশাহী-১ আসন থেকে ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একবার প্রতিমন্ত্রী ও একবার পূর্ন মন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন। কিšত্ত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদদাতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ-দূর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারসহ ১৪টি মামলা হয়। এ সময় তিনি বিদেশ গিয়ে আতœগোপণ করেন। এর পর থেকেই এই জনপদের মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠে তারা এমন বির্তকিত নেতাকে আর জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাই না। এছাড়াও বিএনপির কমিটি গঠন করা নিয়েও তো তার সঙ্গে বিএনপির একাংশের প্রকাশ্যে বিরোধ রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা বিএনপির নেতা সাজেদুর রহমান মার্কনী বলেন, ব্যারিস্টার আমিনুল হক তিন মেয়াদে সাংসদ, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এক সময় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ ছিল না। কিšত্ত দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের বিপদে রেখে তিনি আতœগোপণে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিলাস জীবনযাপন করেছেন।

তৃণমুল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন নি। এ জন্য তানোর-গোদাগাড়ী বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন আর তাকে চায় না। মার্কনী অভিযোগ করে বলেন, ব্যারিস্টার আমিনুল হক তাঁর ক্ষমতার জোরে তানোর-গোদাগাড়ীতে বিএনপিকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছেন। তিনি এখানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটির নামে তার অনুগত ও বির্তকিতদের দ্বারা পকেট কমিটি গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলের প্রবীণ, ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের অনুগত ও আতœীয়-স্বজনদের পদ দিয়ে কমিটি গঠনে তৎপরতা শুরু করেছেন। এছাড়াও তার নামের মনোনয়নপত্র ব্যারিস্টার আমিনুল হক তার ভাতিজাকে দিয়ে প্রতারণা করে উত্তোলন ও গায়েব করেছেন বলেও মার্কনি অভিযোগ করে বলেন, ভোটের মাঠে দেখা হবে কে কত বড় নেতা। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও আতা হকের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।