রাণীনগরের আবাদপুকুর হাটে নেই টোল আদায়ের তালিকা,ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষ

তানভীর আহম্মেদ ,রাণীনগর ,নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরের সব চেয়ে বড় হাট আবাদপুকুরে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠছে।এই হাটের কোথাও নেই টোল আদায়ের তালিকা।

সিডিউল মোতাবেক হাটে ধান বিক্রির জন্য আসা কৃষকদের কোন খাজনা না থাকলেও ইজারাদারের লোকজনদের কাছে অসহায় হয়ে খাজনা দিতে হচ্ছে। ইজারা শর্ত অমান্য করে ক্রেতা- বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকেই অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এতে করে হাট ইজারাদার লাভবান হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন হাটে আগত স্থানীয় হাটুরেরা। জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে কালীগ্রামে অবস্থিত আবাদপুকুর হাট। এই হাট আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মধ্যে ধানের বড় মোকাম হিসেবে খ্যাত। চলতি বাংলা সনে এই হাটের ইজারা মূল্য হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এই হাটটি উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নওগাঁ সদরের সুনিল কুমার মন্ডল ইজারা শর্ত মূলে পায়। শুরুতে টোল আদায়ে কিছুটা সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও সম্প্রতি ইজারা শর্ত ভঙ্গ করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার আবাদপুকুর হাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পশু ক্রয়-বিক্রয়ে শুধুমাত্র ক্রেতার কাছে খাজনা আদায়ের বিধান থাকলেও প্রতিটি গরুর ক্ষেত্রে ৩শ’ টাকার স্থলে ক্রেতার কাছ থেকে ৪ শ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ভেড়া/ছাগলের ক্ষেত্রে ১শ’ ৫০ টাকার স্থলে ক্রেতার কাছ থেকে ২শ’ ৫০ টাকা এবং বিক্রেতার নিকট থেকে আরো ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া ভ্যান সাইকেলের প্রতিটির বিক্রয় ক্ষেত্রে ৯০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও ক্রেতার কাছ থেকে ২শ’ এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হাটে ধান বিক্রিতে ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি মন ৪ টাকা এবং বিক্রেতা কৃষকের খাজনা না থাকলেও নিয়ম বর্হিভূত ভাবে প্রতিমণ ধানে ৩ টাকা খাজনা নেওয়া হচ্ছে। হাঁস-মুরগীর ক্ষেত্রেও নিয়ম ভঙ্গ করে উভয় পক্ষের নিকট থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। তবে ইজারাদাররা রশিদের মাধ্যমে খাজনা আদায় করলেও ওই রশিদে খাজনার পরিমান (টাকা) উল্লেখ না করেই ফাঁকা রেখে রশিদ হাতে ধরে দেয়া হচ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন। হাটে খাসি কিনতে আসা উপজেলার বোদলা গ্রামের মুকুল হোসেন, মাধাইমুড়ি গ্রামের এনামুল হক জানান, খাসি কিনে ১শ’ ৫০ টাকার স্থলে ২শ’ ৫০ টাকা খাজনা নিয়েছে।

বগুড়ার আদমদীঘি সদরের গরু ক্রেতা ফেরদৌস হোসেন জানান, একটি গাভী কিনে ৩শ’ টাকার স্থলে ৪শ’ টাকা খাজনা নিয়েছে ইজারাদারের লোকজন। এছাড়া বিক্রেতার নিকট থেকেও ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একডালা গ্রামের জামাল হোসেন জানান, তার ছেলের জন্য একটি বাইসাইকেল ক্রয় করে ২ শ’ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে এবং বিক্রেতার নিকট থেকেও ২০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এব্যাপারে পশুহাটির খাজনা আদায়ে নিযুক্ত মহুরি শহিদুল ইসলাম জানান, ইজারাদারের নির্দেশে প্রতিটি গরু ক্রেতার কাছ থেকে ৪শ’ এবং বিক্রেতার নিকট থেকে ৫০ টাকা আদায় করছেন। এছাড়া হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আব্দুর রশিদ, জিল্লুর রহমান, মোয়াজ্জিম হোসেনসহ অনেকেই জানান, ধান কেনা-বেচার ক্ষেত্রে সিডিউলে শুধুমাত্র ক্রেতার খাজনা দেওয়ার বিধান থাকলেও আড়ৎদারদের মাধ্যমে প্রতিমন ধান বিক্রিতে ৩ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। কালীগ্রাম ইউপি সদস্য ও ধান ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দীন হেলু জানান, কৃষকের কাছ থেকে ৩ টাকা মন হারে খাজনা আদায় করে ইজারাদারকে দিতে হয়। এছাড়া হাটে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ আছে।

আবাদপুকুর হাটের ইজারাদারের ম্যানেজার রতন কুমার জানান, হাটের ব্যবসায় কিছু নিয়ম-অনিয়ম হতেই পারে। তাছাড়া পশু ক্রয়-বিক্রয়ে বিক্রেতার নিকট থেকে যে টাকা আদায় করা হয় তা নিযুক্ত মহুরিরই নেয়। হাট ইজারাদার সুনিল মন্ডল জানান, ইজারা শর্ত মেনেই হাটে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম বা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আল মামুন জানান, অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত আইনত পদক্ষেপ নেয়া হবে।