১৬ বছরেও মেলে নি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড

মো:আ:হামিদ, বগুড়া_ধুনট প্রতিনিধিঃ অতস সাহা, স্ত্রী আসা কে নিয়ে সপ্নের সংসার বেধে ছিলেন তিনি। সংসার চলাকালে কয়েক বছরের মাথায় স্ত্রী আসার গর্ভে আসে মেয়ে প্রিয়া। প্রিয়া জন্মের আগ থেকে বেধেছিলেন হাজারো সপ্নো। প্রিয়ার যখন জন্ম নেন তখন তার মুখ দেখে যেনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরে ছিলেন তারা। কিন্তু প্রিয়ার জন্মের তিন মাসের মাথায় তার শরীরে হঠাৎ জ্বর আসে। জ্বরের কারনে তিনি স্থানিয় ডাক্তার দেখালে ডাক্তার মেয়ে দেখে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু ডাক্তার যা চিকিৎসা করছিলেন তা সব কিছুই ছিলো ভুল যার কারনে আজ তাকে দিতে হচ্ছে খেসারত। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রতিবন্ধীতে পরিনত হয় প্রিয়া। এখন প্রিয়ার বয়স প্রায় ১৬ বছর সে এখনো স্কুল কি বোঝেনা, বোঝেনা কলম কি ,লেখা পড়া করে কি হবে তাও সে বোঝেনা। নেই তার কোন সপ্নো। প্রিয়া বোঝে শুধু তিন বেলা খেতে হবে। আর বোঝে তার মা বাবা প্রতিবেশিকে। প্রিয়া কে কোন কিছু বলা হলে তা বলতে হয় প্রিয়ার কানের কাছে তাওবা জরে,আর না বোঝার কারন হলো সে প্রতিবন্ধী।

অতস এর সংসারে আরেক নতুন সদস্য এসেছে তার নাম পুজা তার বয়স ১ বছর। তাকে নিয়ে নতুন সপ্নো বেধেছে প্রিয়ার বাবা অতস সাহ এবং প্রিয়ার মা আসা। কিন্তু সপ্নো টা ঘুমে দেখা খুব সহজ কিন্তু জাগিয়ে দেখা খুব কঠিন। নতুন সদস্যর পুজার শরীরে দেখা দিয়েছে সেই প্রিয়ার জ্বর। তাতে হতাস হয়ে পরেছে তার পরিবার। বড় ডাক্তারকে দেখানোর মত নেই টাকা। অভাবের সংসার লবন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। কি দিয়ে করাবেন পুজার চিকিৎসা। বাবার দেওয়া ৭ কাটা জমির উপর বসবাস করছেন তিনি। সংসার গড়ার আগে যা গড়ে ছিলেন তা প্রিয়া কে সেরে তুলতে খরচ হয়ে গেছে। এখন তিনি মথুরাপুর বাজারে পেয়াজি বেচে কুনুরকম সংসার টিকিয়ে রেখেছেন। পরিবার চালাতে গেলে যে খরচ হয় তার চেয়ে যেনো খরচ তার জন্য অনেক বেশি হচ্ছে। কারন প্রিয়ার খাবার তালিকা অনেক বড়। প্রতিদিন তার তালিকায় থাকবে ৩টি ডিম, বড় মাছ, মাংস সহ সবচেয়ে বেশি দামের বাজার। আর এগুলো না থাকলে ভাত খেতেই বসে না প্রিয়া। মেয়ে যে রকমি হক সেটা মেয়ে। মেয়ে যতই প্রতিবন্ধী হক না কেনো মা বাবার কাছে সেটা মেয়ে। যার কারনে মেয়ে যা খেতে চায় তাই দিতে বাধ্য।

এ দিকে প্রিয়ার যত বড় হচ্ছে তার খাবারের তালিকাও বড় যাচ্ছে। সকাল ১০ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত পেয়াজি বিক্রি করে তিনি সংসার কে টিকিয়ে রাখতে চান ,কিন্তু তা পারছেন না। কারন তার ঘোসি দিয়ে জাল দিয়ে পেয়াজি বিক্রি করায় ধোয়া হতো বলে তাকে সেখান থেকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলো বাজার কমেটি। তাই তিনি গ্যাস দিয়ে পেয়াজি ভাজতে হচ্ছে তাকে। আর পেয়াজি বেচে যা লাভ হয় তা গ্যাসের সিলিন্ডারের পেটে চলে যাচ্ছে। প্রিয়া ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে ২ নং ওয়ার্ড এর অন্তরভুক্ত পিরহাটি গ্রামের শাহ পাড়ার অতস সাহা এর প্রথম সন্তান প্রিয়া। প্রতিবন্ধী জিবনের ১৬ বছর পার হয়ে গেলেও মেলে’নি একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রিয়া দু পায়ে ভর করে হাঠতে পারে না এবং সে শ্রবণ এবং বাগ প্রতিবন্ধী। নিজের কাজতো দুরের কথা সে একা একা খেতেও পারে না।

প্রিয়ার মা বলেন, একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের জন্য সব মেম্বার চেয়ারম্যান এর কাছে গেছি কিন্তু তারা শুধু আসসাস দিয়ে যায়। কিন্তু পরে তারা আর কোন কার্ড দেয়’না। এজন্য এখন আমরা আর কোন চেয়ারম্যান মেম্বার এর কাছে যায় না। প্রিয়া বাবা অতস সাহা বলেন, ভোটের সময় হলে আমাদের কাছে এসে মাটি নিয়ে কসম করে বলেছে যে আমি নির্বাচিত হলে তোমার মেয়ের জন্য একটা কার্ড করে দিবো কিন্তু ভোট পার হয়ে গেলে কেউ আমাকে কোন কার্ড দেয়না উপরন্ত আমার থেকে প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য টাকা চেয়ে বসে। তিনি ক্ষভ করে বলেন আমি এ দেশেথাকবো না। তিনি বলেন আমার দোকান যুদি তুলে দেওয়া হয় তাহলে আমি এ দেশে থাকবো না। আমার যা আছে সব বেচে ভারতে চলে যাবো।

প্রতিবন্ধী প্রিয়ার জন্য কোন প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্দ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, আমি তার সাথে দেখা করেছি। আমার কাছে প্রতিবন্ধী কার্ড আসলে তাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।