আমি বাঁচতে চাই-অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ব্রজেন্দ্র

মোঃ এরশাদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ হার্টের রোগে আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া শাখার কার্যকরী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ব্রজেন্দ্র লাল দেব নাথ (৬২), যুদ্ধকালীন সময়ে যার নাম ছিল (ক্যাপ্টিন করিম)। সে উপজেলার পশ্চিম কলাউজান ৬নং ওয়ার্ডের মৃত রামানন্দ দেব নাথের পুত্র।

মুক্তিযোদ্ধা ব্রজেন্দ্র লাল দেব নাথের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে দীর্ঘদিন ধরে তিনি হার্টের রোগে ভুগছিল। আর্থিক সংকটের কারণে ভালভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেনাই তার পরিবার। গত ১৬ডিসেম্বর থেকে শরীরের অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসার কোন অবনতি না হওয়ায় গত ২৫ডিসেম্বর হইতে বর্তমানে চট্টগ্রামের পুর্ব নাছিরাবাদ সাউদার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাঃ হোসেন আহমদের তত্যাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

এখন চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে তার পরিবার। মুক্তিযোদ্ধা ব্রজেন্দ্রের স্ত্রী জানান,বাড়ীতে যা টাকা ছিল এবং গ্রাম থেকে অনেকের কাছ থেকে হলাত করে এতদিন তার চিকিৎসা চলছিল। বর্তমানে চিকিৎসার খরছ চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার বলছে হার্টের সমস্যা তাই আরো কয়েকদিন চিকিৎসার পর বুঝা যাবে তার শরীরের অবস্থা কতটুকু ভালো আছে।

তিনি প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘদিন থেকে এক রুমের ভাঙ্গা একটা টিনের ঘরে বসবাস করতো ছেলে তার মেয়েদের নিয়ে। ৬মেয়ে এবং ১ ছেলে নিয়ে খুবই অর্থনৈতিক সংকটে চলছিল তার পরিবার। গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে দীর্ঘদিন ঝাঁলমুড়ি বিক্রি করে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে তার ৬টি মেয়ের বিয়ে সমপন্ন করেন এবং ছেলেটিকে এইচ.এস.সি পাশ করান।

ছেলেটির জন্য একটা সরকারী চাকরীর জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করার পরও ঘুষের টাকা দিতে না পেরে ছেলেটির কোন চাকরী হয় নাই। আমি মরে গেলে আমার অসুস্থ্ স্ত্রী’কে দেখাশোনা এবং সংসারের হাল ধরার জন্য ছেলেটি ছাড়া আর কেউ নেই। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, আমি যেদিন এই দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম, হয়তো সেদিনই মরে যেতাম। হাতে একটা গুলির আঘাত পেয়েও সেদিন ভগমানের অশেষ কৃপায় পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। আমি সবার মাঝে আরো বাঁচতে চাই, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সবার সহযোগীতা চাই। আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও গরীবের ঘরে জন্ম নেওয়ায় আজ আমি উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছিনা।

আমি বেঁচে থাকতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একমাত্র ছেলেটির জন্য একটা সরকারী চাকরীর জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার মত একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার আবেদনটি গ্রহন করবেন।

তিনি আরো জানান এবারে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে গত দু’মাস আগে একটি টিনের বাড়ী পেয়েছেন তিনি এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার পর থেকে গ্রামে বাড়ীর সামনে একটা চায়ের দোকান করে বর্তমানে কোন রকম তাদের সংসার চলে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরী দিয়েছিল। চাকরী চলাকালীন আমি খুব সুখেই ছিলাম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে যেদিন ঘাতকেরা আমার নেতা বঙ্গবন্ধুকে সহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছিল। যারা আমার নেতাকে খুন করেছে আমি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কাছে চাকরী করবোনা বলে গ্রামে চলে আসছিলাম। তখন থেকে বাঁশ গাছ কেটে সংসারের হাল ধরেছিলাম।