দীর্ঘদিন পর শার্শায় নৌকা ধানের শীষের লড়াই

জয়নাল আবেদীন, বেনাপোল(যশোর)প্রতিনিধিঃ যশোর-১ (শার্শা) আসনে ১৭ বছর পর এবার লড়াই হচ্ছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নৌকা আর ধানের শীষের। দীর্ঘদিন পর এবার এখানে ভোটের লড়াইয়ে আছেন বিএনপির প্রার্থী। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি আফিল গ্রুপের কর্ণধার শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি এ আসনে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য। এ কারণে জয় ধরে রাখাই হচ্ছে তার বড় চ্যালেঞ্জ।

অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী হলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। যিনি এবার জয় পেতে মরিয়া দলটি। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর নিয়ে গঠিত এই আসনে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আলী তারেক, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির ডা. নজরুল ইসলাম, ১৯৮৮ সালে জামায়াতের অ্যাডভোকেট নূর হোসেন, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রয়ারি বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে শেখ আফিল উদ্দিন বিনাপ্রতিদ্বিতায় নির্বাচিত হন। দশ বছরের শাসনকালে আসনটিতে আওয়ামী লীগ দাপট দেখাচ্ছে। বিপরীতে মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি।

যশোর-১ আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৩১ হাজার ৫৩৩। আর নারী ভোটার এক লাখ ৩২ হাজার ১৫৫ জন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে দলের স্থানীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। শার্শার সব কটি ইউনিয়নে ও বেনাপোল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী টেন্ট খোলা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীর ভিড় লেগে থাকে সেখানে।

কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে উল্টা কোনো ইউনিয়নে অফিস খুলতে পারেনি। তারা বিকল্প পন্থায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলটির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তির অভিযোগ, এইখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সবখানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির বলেন, পুলিশ এখন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বদলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে বেশি ভূমিকা রাখছে। বিএনপির কর্মীরাতো ভোট চাইতে পারছে না। আওয়ামী লীগের লোকেরা তাদের বাধা দিচ্ছে। দেশে যতই উন্নয়ন হোক মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে বিএনপিই জয়লাভ করবে। মানুষ আর আওয়ামী লীগকে চাইছে না। মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা মাওলানা আজীজুর রহমান নির্বাচন করেন। অবশ্য এ নির্বাচনে সামান্য ভোটে পরাজয় বরণ করতে হয় তাকে। এবারো তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে- এমনটি ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি নিজেদের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়।

শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নুরুজ্জামান বলেন, শেখ আফিল উদ্দিন নির্বাচনী এলাকায় তিনি একক নেতা। এলাকায় আওয়ামী লীগ সংগঠিত। নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর শার্শা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশের মতো স্থানীয়ভাবেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। পুলিশের অতি উৎসাহী মনোভাবে সাধারণ জনগণ ভোটের আনন্দ উপভোগ করতে পারছে না।’

এখানে একদলের নির্বাচন হচ্ছে। শার্শা উপজেলা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) এর সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সহিংসতা নেই। এটাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে তিনি মনে করেন।