নওগাঁ-৬ কোন্দল ভুলে বিএনপির নির্বাচনী মাঠে দুই ভাই

মোঃ খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁ-৬ আসনে বিএনপির নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন সহোদর দুই ভাই। দুই ভাইয়ের মধ্যে চলে আসা এক যুগের বৈরি সম্পর্ক পরিণত হয়েছে ভ্রাতৃত্বের সুসম্পর্কে। যে রাজনীতি আপন দুই ভাই আলমগীর কবীর ও ছোট ভাই আনোয়ার হোসন বুলুর মাঝে বৈরি সম্পর্কের পাহাড় তৈরি করেছিলো, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই রাজনীতিই আবার ওই বৈরি সম্পর্কের পাহাড়কে ভেঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধের সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনলো।

দুই ভাই হচ্ছেন নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৩ বারের সংসদ সদস্য ও জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির ও তারই ছোট ভাই বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু।

১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা আলমগীর কবীর। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবীর এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তার ছোট ভাই বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু (আত্রাই-রাণীনগর) এই দুই উপজেলার বিএনপির হাল ধরেন। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে বিএনপির সংকটময় ক্রান্তিকালে নেতাকর্মীদের পাশে অভিভাবক হিসেবে দাঁড়ান আনোয়ার হোসেন বুলু। তিনি নেতাকর্মীদের সকল বিপদে-আপদে পাশে ছিলেন সর্বত্র।

আনোয়ার হোসেন বুলু গত ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলমের কাছে পরাজিত হন। তারপরও আনোয়ার হোসেন বুলু এই আসনে ধানের শীষের হাল ধরে রেখেছেন প্রায় ১ যুগ ধরে। তাকেই মনোনয়ন দেওয়ার দাবী ছিলো এই আসনের বিএনপির নেতা- কর্মীদের। কিন্তু হঠাৎ করেই নাটকীয় ভাবে তার বড় ভাই আলমগীর কবীর দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর পুণরায় বিএনপিতে ফিরে আসেন। এতবছর পর রাজনীতিতে আলমগীর কবিরের ফিরে আসা নিয়ে বিএনপি নেতা ও এলাকাবাসীদের মাঝে শুরু হয় নতুন হিসেব- নিকাশের।

অবশেষে দল থেকে তাকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি থেকে ধানের শীষের মনোনিত প্রার্থী করে প্রতিক দেওয়া হয়। এতে দুই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, হতাশা, চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের দেখা দিয়েছিলো। অনেকে দুংখ প্রকাশ করেছেন। কেউ রাজনীতি করবে না, এমনকি ধানের শীষে ভোটও দিবে না বলেও বলতে শোনা গেছে।

অপরদিকে গত ২২ নভেম্বরে নওগাঁ-৬ আসনের বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা আলমগীর কবীরকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করে। কিন্তু রাজনীতি দুই ভাইয়ের মধ্যকার দা-কুড়াল সম্পর্ককে আর দীর্ঘ করে রাখলো না। বর্তমানে দুই ভাই এক হয়ে নওগাঁ-৬ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করার লক্ষে একই মঞ্চে ধানের শীষের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। দুই ভাই এক সঙ্গে নির্বাচনী গনসংযোগ, উঠান বৈঠন, মতবিনিময় সভাসহ সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকাবাসী দুই ভাইয়ের পুনরায় এই মিলনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। শুধু তাই নয় দুই ভাইয়ের মিলন এই আসনে বিভক্ত হওয়া বিএনপিকে জোড়া লাগিয়ে দেওয়ার কারণে বিএনপি দলের নেতাকর্মীদের মাঝে এখন চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। নতুন করে চাঙ্গা হওয়া বিএনপি নেতারা আবারো এই আসনে ধানের শীষকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে সফল হবেন বলে আশা করছেন অনেক বিএনপিনেতারা।

রাণীনগর থানা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএস আল ফারুক জেমস বলেন, নওগাঁ-৬ আসনে বিএনপি বলতে এই দুই ভাইকে বোঝায়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। দুই ভাই এক হওয়ার কারণে আমরাও নতুন করে রাজনীতি করার অনুপ্রেরনা পেলাম যা কিছুদিন আগেও ছিল না। দুই ভাইয়ের মিলন অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক। কারণ দুই মেরুর মানুষ এখন একত্রিত। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাদ ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ আমাদের মাঝে আর কোন দলীয় কোন্দল নেই। এখন আমরা সবাই হাতে হাত রেখে এক সঙ্গে কাজ করবো।

আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, নানা কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। কিন্তু রাজনীতি আবার আমাদের দুই ভাইকে একত্রিত করে দিয়েছে।এখন আমরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে দুই ভাই এক হয়েছি। নওগাঁ-৬ আসনে এখন আমরা দুই ভাই ধানের শীষের এক রক্ষক। আসন্ন নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে হয় এবং সাধারন ভোটারা যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে ধানের শীষ প্রতিক অবশ্যই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেন, এলাকার মানুষের চাওয়ার ভিত্তিতেই রাজনীতিতে আবার আমার ফিরে আসা। এই আসনের মানুষ এখন অত্যাচারের কষাঘাতে জর্জড়িত। তাদেরকে অত্যাচারিত শাসকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা দুই ভাই আবার মিলিত হয়েছি। আমাদের একত্রিত শক্তিকে আর কেউ পরাজিত করতে পারবে না। কারণ আমরা সব সময় জনগনের জন্য রাজনীতি করে এসেছি। আশা রাখি আসন্ন নির্বাচনে কোন পরাশক্তিই আমাদের বিজয়কে আটকাতে পারবে না।