নড়াইল-২ আসনে বুকে-পিঠে মাশরাফীর পোস্টার ঝুলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বগুড়ার সাখাওয়াত

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ আজ (২১ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত হয়ে লড়ছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। এই এলাকা বা সংসদীয় আসনে মাশরাফীর নির্বাচনী প্রচারণা করবে স্থানীয় মানুষেরা।

এখানে বগুড়ার সাখাওয়াত কি করছেন? তাও আবার রাত নেই দিন নেই, মাথায় বাংলাদেশের পতাকে বেঁধে, বুকে-পিঠে মাশরাফীর পোস্টার ঝুলিয়ে এলাকায় এদিক-ওদিক ছুটে চলছেন। বগুড়ার মানুষের নড়াইলে কি কাজ? কখনো বাঁশি বাজিয়ে, কখনো আবার মুখে সকলের কাছে ভোট চাচ্ছেন! এটাও কি সম্ভব! এমন তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচনে নিজ এলাকা ছেড়ে কি কেউ অন্য এলাকায় গিয়ে তাদের প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়ে বেড়াতে পারে? পারে। ভালোবাসার অধিকার থেকে এমন পাগলামী করা যায়।

বাংলাদেরশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফীর জন্য ভালোবাসা। এই ভালোবাসা তাকে নিয়ে এসেছে নড়াইলে। নাম- মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। বাড়ি বগুড়া জেলায়। নড়াইলে এসে সকলের কাছে মাশরাফীর জন্য ভোট প্রচারণায় নেমে পড়েছেন এই মাশরাফী ভক্ত। সারা গতরে মাশরাফীর ছবি। ধ্যানে জ্ঞানে মাশরাফী। কখনো মুখে বাঁশি, কখনো মুখে- শুধু তার মাশরাফী- “মাশরাফী ভাই এর সালাম নিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিন”। দুদিন আগে তিনি নড়াইলে এসেছেন। কোথায় থাকবেন? নড়াইলে মাশরাফী ছাড়া আর কেউতো তেমন পরিচিত না। কিন্তু বসের জন্য তো তাকে কাজ করতে হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে- মাশরাফীকে না জিতিয়ে বাড়ি ফিরবেন না।

তাই নড়াইলের ডলফিন হোটেলে রাত কাটানোর পরিকল্পনা করা। এখানেই আহারের ব্যবস্থা করে নেয়া। শরীর চলার জন্য কিছুটা বিশ্রাম। এরপর আবার নামতে হবে মাশরাফীকে বুকে নিয়ে। মাশরাফীর ক্যানভাস (ভোট চাওয়া) আঁকতে হবে চিত্রার পাড়ে। এসময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ওয়ানডে সিরিজ শেষ। বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে মাশরাফীর নেতৃত্বে। ৩০ তারিখে আবার নির্বাচন। এরই মধ্যে তার পায়ের চিকিৎসা চলছে। এখনও বাড়ি ফেরেননি ঘরের ছেলে।

গতকাল (২০ ডিসেম্বর) অবশ্য এসব কিছু জানিয়ে নড়াইলবাসীর উদ্দেশ্যে প্রথম বক্তৃতা দিয়েছেন মাশরাফী। সাদা পাঞ্জাবি, আর কালো চাদরে বেশ মানিয়েছে তাকে। মনে হচ্ছে রাজপথে নেতৃত্ব দিতে সে পারবে। সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন। যাক সেসব কথা।

নড়াইলবাসীর মত নড়াইলে তার প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন সাখাওয়াত একথা কি মাশরাফী জানেন? এতদূর থেকে আসা ভক্তটি একা একা নড়াইলের রাস্তায় কনকনে শীতে তার জন্য দ্বারে দ্বারে ভোট চাচ্ছেন। এরই মধ্যে মাশরাফীর কিছু বন্ধু ও বড় ভাই এগিয়ে এলেন। পরিচয়ের পালা শেষ করে শুধালেন, কোথায় উঠেছেন? জবাবে সে বললেন,“চিত্রা রিসোর্টে”।“এর আগে কোথায় ছিলেন?” তারা জিজ্ঞাসা করলেন।“ডলফিন হোটেলে”, সাখাওয়াত বললেন। প্রশ্নঃ “রিসোর্টে থাকার কে ব্যবস্থা করলো? সাখাওয়াতঃ মাশরাফী ভাই। ভাই আমার সম্বন্ধে জেনেছেন। এরপর ভাই আমার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। প্রশ্নঃ খাওয়া দাওয়া কই চলছে? সাখাওয়াতঃ ভাই আজ থেকে তার মামার বাড়িতে খেতে বলেছেন। এই হচ্ছে ভালোবাসা। না চলচ্চিত্র “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা” না। এই আচরণ, আতিথেয়তা এমনই।

সাখাওয়াতের মাশরাফীর প্রতি, মাশরাফীর সাখাওয়াতের প্রতি। যে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টানে সাখাওয়াত মাশরাফীর জন্য নড়াইলে ছুটে এসেছেন তার জন্য মাশরাফী কোন প্রতিদান দেননি। দিয়েছেন এক অদৃশ্য আলীঙ্গন।