শেরপুরে বিএনপি প্রার্থী প্রিয়াংকার গাড়ি বহরে হামলা অভিযোগ জানাতে গিয়ে ১১ নেতা-কর্মী আটক

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত বিএনপি প্রার্থী ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকার গাড়ির বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

২৪ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার ঘুঘুরাকান্দি এলাকায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় প্রিয়াংকার পাজেরো গাড়ি ভাঙচুর এবং তার আত্মীয়সহ ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়। পরে প্রার্থী প্রিয়াংকা ওই ঘটনার বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে সাথে থাকা জেলা বিএনপি নেতা হাতেম আলীসহ ১১ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে প্রিয়াংকার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের আহত করা এবং ওই ঘটনায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো নেতা-কর্মীদের আটকের ঘটনায় সর্বত্র উদ্বেগ-আতঙ্কের পাশাপাশি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, সোমবার বিকেল ৪ টার দিকে সদর উপজেলার ঘুঘুরাকান্দি এলাকায় নিজের একটি পাজেরো গাড়িতে ডাঃ প্রিয়াংকা তার মা’সহ অন্যান্য আত্মীয়- স্বজন ও দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত গণসংযোগে বের হন।

বেলা সাড়ে ৪ টার দিকে ঘুঘুরাকান্দি গ্রামে পৌছালে সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীরা গণসংযোগে বাঁধা দিয়ে গাড়ির বহরটি ফিরিয়ে দেয়। ওইসময় তারা শান্তিপূর্ণভাবে গাড়িটি ঘুরিয়ে আসার সময় পেছন থেকে লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ির পেছনের ও দু’পার্শ্বের কাঁচ ভেঙে ফেলে এবং গাড়িতে বসা লোকজনের উপর হামলা করে। এতে প্রার্থীর খালা ও ভাইসহ ১০ জন আহত হন। পরে প্রিয়াংকা গাড়িটি নিয়ে শহরে ফিরে এসে বিষয়টি জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুবের কার্যালয়ে দেখা করতে চাইলে প্রথমে তার সাথে রিটার্নিং কর্মকর্তা দেখা করতে না চাইলে তার দরজার সামনে বসে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান নেন ডাঃ প্রিয়াংকা।

এক পর্যায়ে প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করে রিটার্নিং কর্মকর্তার সাক্ষাত দেন। ওইসময় ডাঃ প্রিয়াংকা আবেগতাড়িত হয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ঘটনার বিবরণ খুলে বলেন এবং তার বিচার ও নিজের নিরাপত্তার দাবি জানান। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ওইসময় প্রার্থীকে শান্ত হয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসসহ ঘটনাটি নির্বাচনী ইলেক্ট্ররিয়াল সেলে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

এদিকে কার্যালয়ের নিচে উত্তেজিত নেতা-কর্মী ও আত্মীয়রা ক্ষোভ জানালে সেখানে অবস্থানরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুলিশ সদস্যরা প্রার্থীর আত্মীয়-স্বজন ও বিএনপি নেতা হাতেম আলীসহ ১১ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে, সোমবার সকালে শহরের মাধবপুরস্থ বিএনপির নির্বাচনী অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা নিজেরাই তাদের নৌকা প্রতীক ও নির্বাচন কেন্দ্র ভেঙে বিএনপি’র কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ধরপাকড় করছে। আমাদের শতশত নেতা-কর্মী দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যে মামলায় কারাগারে, আবার কেউ কেউ এলাকাছাড়া রয়েছে। এর মধ্যে তারা কিভাবে নৌকা প্রতীক পোড়াবে? সংবাদ সম্মেলনে প্রিয়াংকা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিমাতাসূলভ আচরণের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন এবং সমস্ত অভিযোগ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে দেশবাসীকে অবগত করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি যাচাই-বাছাইপূর্বক দায়িত্ব পালন করে লেভের প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে এবং তার প্রচারণায় বাধা, হামলা, মিথ্যা মামলা, গণগ্রেফতার ইত্যাদি বন্ধ করার জোর দাবি জানান।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হুইপ আতিউর রহমান আতিক সম্পর্কে বলেন, তিনি আমার পিতৃতুল্য। আতিক আঙ্কেল বিভিন্ন সমাবেশে বলে থাকেন, আমি ছোট মানুষ, রাজনীতি বুঝিনা, আমি তার তুলনায় দুর্বল প্রার্থী। এমনকি বিভিন্ন সভায় প্রকাশ্যে বলে থাকেন, আমি নাকি কোন প্রার্থীই না। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমি যদি দুর্বল হই তাহলে আমার নেতা কর্মীদের প্রতি এত হামলা-মামলা কেন? তিনি অবশ্যই আমাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মূল্যায়ন করেন এবং নির্বাচনে ফলাফল উল্টো হতে পারে এই ভয়ে তিনি তার নেতা-কর্মীদের দিয়ে আমার কর্মীদের নির্যাতন করছেন।

সেনাবাহিনীর প্রতি তার আস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল, আমি আশা করবো অতীতের মতো সেনাবাহিনী তাদের পেশাদারিত্ব ধরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে জাতীর আস্থার মূল্যায়ন রাখবে।