সিলেটে জামানত হারালেন দুই এমপিসহ ৩১ প্রার্থী

আবুল হোসেন, সিলেট প্রতিনিধিঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট জেলার ৬টি আসনে এবার নির্বাচন করেছেন মোট ৪৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির বর্তমান দুই এমপিসহ ৩১ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় তাদের জামানত বাতিল হয়। এছাড়া সিলেট জেলার ৬টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একটি মাত্র আসনে জয় পেয়েছেন গণফোরাম মনোনীত উদীয়মান সূর্য প্রতীকের প্রার্থী মোকাব্বির খান। সিলেট জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে রোববার মধ্যরাতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সরবরাহ করা নির্বাচনী ফলাফল শিট বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সিলেট-১ আসনে জামানত হারানো প্রার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ আসনে ১০ জন প্রার্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ৮জনই জামানত হারান।

সিলেট-২ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী এ হিয়াসহ জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৬ জনের। এ আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

সিলেট-৩ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ ৫ জন প্রার্থীর। এ আসনে মোট৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন।

সিলেট-৪ আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। এর মধ্যে ৩ জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

সিলেট-৫আসনে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এর মধ্যে বর্তমান বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিনসহ ছয়জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

সিলেট-৬ আসনে সর্বমোট ৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এর মধ্যে ৩জন প্রার্থী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম বলেন, যে ৩১ জন মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগের কম ভোট পেয়েছেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তারা মনোনয়ন দাখিলকালে ২০ হাজারটাকা করে দেয়া জামানত ফেরত পাবেন না। আর যারা মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়েছেন তারা আবেদন সাপেক্ষে জামানত হিসেবে জমা দেয়া টাকা ফেরত পাবেন।

সিলেট-১ আসনে মোট ভোটার ৫লাখ ৪৪হাজার ২১৯জন, কেন্দ্র সংখ্যা ২১৫টি। মোট প্রদত্ত ভোট ৪লাখ ৩৩হাজার ৯৬১টি। বৈধভোটের সংখ্যা ৪লাখ ২৬হাজার ৫০৯টি। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৭হাজার ৪৫২টি। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মো. রেদওয়ানুল হক চৌধুরী ২হাজার ২৪ ভোট, লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ৫০২ ভোট, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কোদাল প্রতীকের প্রার্থী উজ্জল রায় ৪১৬ ভোট, হারিকেন প্রতীকের বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. আনোয়ার উদ্দিন বোরহানাবাদী ২৯৯ ভোট, বটগাছ প্রতীকের বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা নাসির উদ্দিন ২২০ ভোট, মই প্রতীকের বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রণব জ্যোতি পাল ১৮৭ভোট, মিনার প্রতীকের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মুহাম্মদ ফয়জুল হক ১৫৯ভোট এবং আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ পেয়েছেন১৫৫ ভোট।

মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নৌকা প্রতীক নিয়ে ২লাখ ৯৮হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর পেয়েছেন ১লাখ ২৩হাজার ৮৫১ ভোট। সিলেট-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৮৬হাজার ৫৮৬ জন। ভোটকেন্দ্র ১২৭টি। প্রদত্ত ভোট ১লাখ ৪৯হাজার ৮৭৩টি। বৈধভোটের সংখ্যা ১লাখ ৪৮হাজার ১৮৮টি। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ১হাজার ৬৮৫টি। এই আসনে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খান পেয়েছেন ৬৯হাজার ৪২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাব প্রতীকের মুহিবুর রহমান পেয়েছেন ৩০হাজার ৪৪৯ ভোট।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সিংহ প্রতীকের এনামুল হক সর্দার ২০হাজার ৭৪৫ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয়পার্টির নেতা মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১৮হাজার ৩২ ভোট, দেওয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুহাম্মদ মুনতাছির আলী ৫হাজার ১৭১ ভোট, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. আমির উদ্দিন ১হাজার ৭৪০ ভোট, মটর গাড়ি (কার) প্রতীকের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব ১হাজার ১৭০ ভোট, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. মনোয়ার হোসাইন ১হাজার ১৫৬ ভোট এবং টেলিভিশন প্রতীকের বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো.মোশাহিদ খান পেয়েছেন ৩০৫ ভোট।

সিলেট-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ২৩হাজার ৬৫৬ জন। ভোটকেন্দ্র ১৪৮টি। প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২লাখ ৭০ হাজার ৩৫২টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২লাখ ৬৬হাজার ৯৯৫টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ৩হাজার ৩৫৭টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছেন ১লাখ ৭৬হাজার ৫৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী পেয়েছেন ৮৩হাজার ২৮৮ ভোট। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থী দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকের খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মো. দিলওয়ার হোসাইন পেয়েছেন ২হাজার ৯৮৬ ভোট, লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির মো. উছমান আলী পেয়েছেন ২হাজার ৯১৬ ভোট, হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলনের এম এমতিন (বাদশা) ৬৯৮ ভোট, রিকশা প্রতীকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান ২৯২ ভোট এবং আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীমো. আব্দুল ওদুদ পেয়েছেন ২২৮ ভোট।

সিলেট-৪ আসনে ১৫৩ কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ৩লাখ ৮২হাজার ২৩০ জন। প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৩লাখ ২৪হাজার ৫৭৩টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ৩লাখ ২০হাজার ৯৩টি। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৪হাজার ৪৮০টি। এই আসনে ইমরান আহমদ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২লাখ ২৩ হাজার৬৭২ ভোট। তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম পেয়েছেন ৯৩হাজার ৪৪৮ ভোট। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. জিল্লুর রহমান পেয়েছেন ২হাজার ৩৭০ভোট, লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান ৪২৩ ভোট এবং কোদাল প্রতীকের বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মনোজ কুমার সেন পেয়েছেন ১৮০ ভোট।

সিলেট-৫ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ২৪হাজার ৫০৮ জন। ভোটকেন্দ্র ১৫৮টি। প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২লাখ ৪০হাজার ৭৫০টি। মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ২লাখ ৩৬হাজার ২৯৭টি। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৪হাজার ৪৫৩টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার ১লাখ ৩৯হাজার ৭৩৫ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়ত নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৮৬হাজার ১৫১ ভোট। এই আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত বিরোধী দলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন এমপি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৮হাজার ৪৪২ ভোট পেয়েছেন, হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নুরুল আমিন ৮৭৩ ভোট, সিংহ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল মুনির চৌধুরী ৭১৮ ভোট, মিনার প্রতীকের ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) এমএ মতিন চৌধুরী ২৮২ ভোট, উদীয়মান সূর্য প্রতীকের মো. বাহার উদ্দিন আলরাজী ২১৩ ভোট এবং হারিকেন প্রতীকের মুসলিম লীগের প্রার্থী মো. শহিদ আহমদ চৌধুরী পেয়েছেন ৮৩ ভোট।

সিলেট-৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ৯৩হাজার ৩১৫ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯১টি। প্রদত্ত ভোট ৩লাখ ৯হাজার ৫৫৫টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ৩লাখ ৬হাজার ৬৮টি। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৩হাজার ৪৮৭টি। এ আসনে ১লাখ ৯৬হাজার ১৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী পেয়েছেন ১লাখ ৮হাজার ৮৯ ভোট। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আজমল হোসেন পেয়েছেন ১হাজার ৪২ ভোট, মটরগাড়ি (কার) প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া ৮৪১ ভোট এবং শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসা কুলা প্রতীকের বিকল্পধারার প্রার্থী সাবেক সচিব শমসের মবিন চৌধুরী মাত্র ৮১ ভোটপেয়েছেন।