কলা আর পান ঝিনাইদহ জেলার প্রাণ

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহে পান দেশের বড় একটা চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। সাথে সাথে পান চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এ জেলার তাই এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে পান আমদানি না করার দাবি জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পান চাষিরা।

তাদের সঙ্গে একমত হয়ে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন-পান আমদানি না করে পানের নতুন ও উন্নত জাত আবিস্কার এবং লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা দরকার। এতে দেশে পানের সরবরাহ যেমন বাড়বে, ভোক্তারাও উন্নত মানের পান পাবেন আর কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও হবে।

ঝিনাইদহের বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে গ্রামের পর গ্রামে পানের বরজ দেখা গেছে। হরিনাকুন্ডুর ভবানিপুরের কালিতলা পাড়ার পানচাষি আহমেদ আলী বরাবরের মত এবারও এক বিঘা জমিতে পান চাষ করছেন। তার মতে, এবছর পান চাষে খরচ বাদে তিনি কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু পান তিনি বাজারে বিক্রিও করেছেন।

আরেক পান চাষি জানালেন তিনিও ৪ বিঘা জমিতে পান চাষ করছেন। কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। পানের বরজ মেরামত, সার, বীজ, খইল, সেচ ও দিনমজুরের খরচ বাদেও কমপক্ষে ৮ লাখ টাকা লাভ হবে বলেন তিনি। তার মতে, একজন কৃষকের দেড় থেকে দু’বিঘা জমিতে পানের বরজ থাকলে এবং তার সঠিক পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করতে পারলে ৫-৬ বছরেই বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়া যাবে।

সরেজমিনে গিয়ে ভবানীপুর এলাকায় পানবাজারে সাংবাদিক জাহিদুর রহমান তারিকের সাথে কথা হয় বাজার মালিক সমিতির নেতা আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি জানান, ঝিনাইদহের পান জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, শমসেরনগর, নবীগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কিন্তু এলসির মাধ্যমে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে পান আমদানি করায় পান চাষিরা প্রতি বছরই মার খাচ্ছেন। তারা উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। তিনি কৃষক ও কৃষির স্বার্থে অবিলম্বে পান আমদানি বন্ধের দাবি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ উপ-পরিচালকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলা আর পান হচ্ছে এ জেলার ব্রান্ডিং ফসল। জেলার সর্বত্রই পান চাষকরা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয় হরিনাকুন্ডুতে। গত বছর জেলায় ২ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে ২৫,০৮৪ টন পান উৎপন্ন হলেও এবার তা ২ হাজার ৪০০ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। ফলে উৎপাদনও বাড়বে। দেশে উৎপাদিত পানের প্রায় ৭০ ভাগই এ জেলায় উৎপন্ন হয়।

অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ জানান, উন্নত মানের উৎপাদন প্রযুক্তি ও উচ্চফলনশীল জাতের অভাবে পান চাষ করে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি ও তার বিভাগীয় পর্যায়ের মাঠ কর্মকর্তারা পান চাষকে আগ্রাধিকার দিয়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।