আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের খামখেয়ালীপনা, উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা সহ প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের প্রচলিত নিয়মনীতি ও বিধি বিধান উপেক্ষা করায় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ থাকায় পাঠদান অব্যহত হয়েছে।
এনিয়ে ভূক্তভোগী অভিভাবক মহলের মাঝে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের বান্নাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ চিত্রের বাস্তবতা মেলে। উপজেলা সদর থেকে বেশ দূরত্বে অবস্থিত ওই বিদ্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টির অফিস কক্ষসহ প্রতিটি শ্রেণীকক্ষই তালাবদ্ধ। এমনটি বিদ্যালয়টিতে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয় নি।
কারণ হিসেবে জানা যায়, গতকাল ছিল উপজেলার সকল ক্লাষ্টারভূক্ত বিদ্যালয় সমূহের প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সভা। এ কারণে অনেক প্রধান শিক্ষকই বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে উপজেলা পর্যায়ে ওই মাসিক সভায় যোগদান করেন। এর মধ্যে বান্নাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্যতম। সেখানে গিয়ে দেখা যায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতেও আসলেও শ্রেণী কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় শেষাবধি আবারো বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
স্থানীয় সচেতন অনেকের নিকটে জানা যায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক সংকটের কারণেই এমন উদ্ভট পরিস্থিতি। বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৫ জন শিক্ষক অনুমোদিত রয়েছে। এক্ষেত্রে ৩ জন শিক্ষক নিয়মিত কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে গত বছরের আগস্ট মাসে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা লায়লা পারভীনকে বান্নাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে খোদ উপজেলা সদরের জামালপুর ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে পদায়ন করেন।
অপরদিকে, ওই বিদ্যালয়ের অপর সহকারী শিক্ষক শাহা আলমকে‘ডিপিএড’ প্রশিক্ষণের জন্য ডেপুটেশনের ছাড়পত্র দেয়া হয়। ফলে বান্নাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক ছাড়া সকল সকল সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষক ইমদাদুল হক মন্ডল বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ করে মাসিক সভায়যোগ দেয়ায় বিদ্যালয়টি একেবারেই শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে। এ কারণে অন্যান্য দিনের ন্যায় বিদ্যালয়ে আসলেও অজানা কারণে তালাবদ্ধ দেখে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যায়।
এমন অচলাবস্থার নেপথ্যের কারণ জানতে বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে না পাওয়া কিছু জানা সম্ভব হয় নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক মিনারা বেগম, সাজা মিয়া ও সুরুজ মিয়াসহ অনেকের সাথে কথা বললে তারা এ ব্যাপারে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি।
হোসেনপুর ক্লাস্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আতিকা মরিয়ম স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি সন্তোষ জনক কোন উত্তর দিতে না পারলেও বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেন। এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্যাহিশ শাফী’র সাথে তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি প্রধান শিক্ষকের উপর নয় সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়ে দেন দায়িত্বরত সহকারী শিক্ষা অফিসারের প্রতি।
সব মিলিয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরস্পর বিরোধী সাংঘর্ষিক এমন অনিয়মের বিষয়টি মূলতঃ মরার উপর খাড়ার ঘাঁ বলে প্রতিয়মান।
সর্বোপরি বিদ্যালয়টিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পড়ালেখার স্বার্থে ভূক্তভোগী অভিভাবক মহল ঘটনাটি সরেজমিনতদন্ত সাপেক্ষে দায়িত্বে অবহেলায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন