সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত অর্ধশত

নোমান মাহমুদ, সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ তৈরি পোষাক খাতে বেতন বৈষম্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাভার আশুলিয়ার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ, গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এসময় সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

আজ (৮ই ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি, উলাইল ও আশুলিয়ার কাঠগড়া, খেজুর বাগান ও জিরাবো এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বেতন বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সাভারের হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শামস স্টাইল ওয়্যারস লিমিটেডের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে স্ট্যান্ডান্ড গ্রুপ, ডার্ট গ্রুপ ও জেকে ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরাও তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হেমায়েতপুর-শ্যামপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকে।

এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার সাউদার্ন বিডি লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস লিমিটেড, হ্যাসন কোরিয়া সোয়েটার লিমিটেড, এসবিএস ডেনিম ওয়্যার লিঃ, লিলি এ্যাপারেলস লিঃ, ক্রস ওয়্যার লিঃ, ম্যাট্রো নিটিং লিঃ ও এশিয়ান নিটওয়্যার লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এসময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সহ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর ওসি মাহমুদর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাভার ও আশুলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল এলাকায় অবস্থিত আনলিমা টেক্সটাইল লিঃ এর ৬ তলায় কাটিং সেকশনে কর্মরত রিপন নামে এক শ্রমিক জানান, দুপুরে খাবার বিরতির পর সুমন (২২) নামে একই সেকশনে জুনিয়র সিজার ম্যান হিসাবে কর্মরত তার এক সহকর্মী বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে কারখানায় ফেরার পথে উলাইলের স্টান্ডার্ড গ্রুপের সামনে শ্রমিক-পুলিশের সংঘর্ষে পরে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলা সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সুমন মিয়া (২২) শেরপুর জেলার, শ্রীবরদী উপজেলার কলাকান্দা গ্রামের আমের আলীর ছেলে।

এবিষয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা আমজাদুল হক জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েক জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে সুমন মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে তারা মৃত অবস্থায় পান।

অপরদিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে এর মধ্যে সুমন মিয়া নামে একজনকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। তার বুকের বা পাশে গোল আকৃতির আঘাতের চিহ্ন ছিলো। প্রাথমিকভাবে আঘাতটি গুলির বলে ধারনা করছি, তবে ময়নাতদন্তের পরই তার মৃত্যুর কারন নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে শ্রমিক নিহতের ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান শামীম বলেন, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আনলিমা কারখানার শ্রমিকদের সাথে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেই ব্যাপারে তার জানা নাই।