কেশবপুরে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে

আজিজুর রহমান / সোহানা ফেরদৌস সুইটি, কেশবপুর: কেশবপুরে গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে এক সময় ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার দৃশ্য দেখা যেতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে যান্ত্রিক আবির্ভাবের জন্য ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে দেখা দিয়েছে।

গ্রামে অঞ্চলে অগ্রায়ন মাসে নতুন ফসল ঘরে তোলার পর এবং পৌঁষ সংক্রান্তিতে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের অধিকাংশ বাড়িগুলি। গ্রামের স্বচ্ছল বাড়িগুলোতে ঢেঁকিঘর হিসেবে আলাদা ঘর থাকত। ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি দিয়ে এক সময় ধান ভাঙ্গানোর কাজ করা হতো ব্যাপকভাবে। ঢেঁকি দিয়ে শুধু ধান থেকে চালই নয়, পিঠে-পুলি তৈরির জন্য চালের গুড়াও তৈরি করা হতো। ঢেঁকি নিয়ে এক সময় জনপ্রিয় গান ও প্রবাদ বাক্য রচিত হয়েছিল। যেমন ‘ধানভাঙ্গিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া-দুলিয়া ও ধান ভাঙ্গিরে’ এই গানটি এক সময় গ্রাম অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকিকে নিয়ে গান ও প্রবাদ প্রচলিত থাকলেও ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। শোনা যায় না ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ। শহরে তো বটেই, আজকাল গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও বাস্তবে হয়তো দেখেনি। অনেকের কৌতুহল কেমন করে মেশিন ছাড়া ধান থেকে চাল বের করা হতো।

আসলে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বানানোই ছিল ঢেঁকির কাজ। ঢেঁকি হচ্ছে কাঠের তৈরি কল বিশেষ। প্রায় ৬ ফুট লম্বা ও ৯ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট একটি ধড় থাকে ঢেঁকিতে। মেঝে থেকে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড়ের একেবারে সামনে দুই ফুট লম্বা একটি গোল কাঠ থাকে। এটাকে মৌনা বলা হয়। দু’টি বড় কাঠের দন্ডের ভেতর দিয়ে একটি ছোট হুকড়া হিসেবে কাঠের গোরাকার খির থাকে।

গ্রামের মহিলারা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। দরিদ্র পরিবারের মহিলারা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে আয়-রোজগারের পথ বেছে নিতেন। সেই সময় ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের আয়ের প্রধান উৎস। কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়ে বিদ্যুৎ চালিত মেশিন (ধান ভাঙ্গার চাল কল) এর মাধ্যমে মানুষ এখন অতি সহজেই অল্প সময়ে ধান থেকে চাল পাচ্ছে।

গ্রামে গ্রামে বসছে চাল তৈরির কল। হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মত ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো সে সবের দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।