গুরুদাসপুরে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় এলাকাবাসী

মোঃ নাজমুল হাসান নাহিদ, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধিঃ নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন ফসলি জমিতে অবাধে চলছে পুকুর খনন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় এলাকবাসী। অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক তিন ফসলি আবাদি জমিতে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করা হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিনকেদিন এর পরিমান দূর্বার গতিতে বেড়েই চলেছে। উর্বর ফসলি জমিতে পুকুর খনন করায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষিবিভাগ। গুরুদাসপুরের প্রতিটি এলাকাতেই প্রতি বছরেই প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই তিন ফসলি আবাদি জমিতে পুকুর খনন করায় দিন দিন আবাদি জমি কমে যাচ্ছে।

উপজেলার সব ইউনিয়নেই প্রত্যেকটি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে ক্রমেই কমছে চাষের জমি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে জলবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে চাপিলা ইউনিয়নে অনেক মাঠ-ঘাট ছয় মাস পানিতে আটকে থাকে। আর এই চাপিলার মতই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিয়াঘাট। এলাকার সাধারন মানুষ বলছে দ্বিতীয় চাপিলা হতে চলেছে বিয়াঘাট!

গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজের প্রভাষক মাজেম ও মাসুদ রানা বলেন, বিয়াঘাটের রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবি খারাপ। মাটির গাড়ির জন্য রাস্তায় চলাই যায়না। দ্রুত অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোরদাবি জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে সবুজ ফসলের সমারাহ। দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়। ধানের সবুজ রং ও এর অপরুপ সৌন্দর্যে ধানের পাশেই কুমারখালী চরপাড়ায় চলছে দুইটি ও চাপিলা বাজার সংলগ্ন চারটি, নাজিরপুর ইউনিয়নের ঝাউপাড়া মাঠে চলছে দুইটি পুকুর খনন। এই কয়েকটি পুকুর কাটা হচ্ছে তিন ফসলি জমির ওপর। চাপিলা বাজার সংলগ্ন দুইটি পুকুর কাটাচ্ছেন মোঃ রুহুল এবং মোঃ আয়নাল নামের দুই ব্যাক্তি অপর পাশের দুইটি কাটাচ্ছেন মোঃ হেলাল হোসেন ও মোঃ মামুন আলী।

আর বিয়াঘাট ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামে একটি কাটাচ্ছে ফল ব্যবসায়ী মান্নান। ঝাউপাড়া এলাকায় একটি কাটাচ্ছেন চাপিলা শাহী বাজারের আলমগীর হোসেন আলম ও আরেকটি কাটাচ্ছেন ইয়াকুব নামের এক ব্যক্তি। সাধারন কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে এইসব অর্থলোভী মাটি ব্যবসায়ী ব্যক্তিরা পুকুর খনন করাতে উৎসাহীত করছে কৃষকদের। যে সকল জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে সেখানে ধান গম আখসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হতো। এছাড়াও পাশ্ববর্তী সকল জমিতেই বর্তমানে ধান আবাদ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে পুকুর মালিকরা বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই পুকুর খনন করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সকলকে অবগত করেই আমরা পুকুর খনন করছি। চাপিলা বাজারের একটি পুকুর কাটাচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ী মোঃ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই প্রত্যেকটি পুকুর কাটা হয়।

এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল করিম বলেন, গুরুদাসপুরের প্রতিটি এলাকাতেই আবাদি জমিতে পুকুর খনন চোখে পড়ছে। বিশেষ করে চাপিলা, বিয়াঘাট বেশি। অধিকাংশই তিন ফসলি জমিতে পুকুর করা হচ্ছে। এসব ফসলি জমিতে বর্ষাকালে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। এভাবে পুকুর খনন চলতে থাকলে গুরুদাসপুরে আবাদি জমি একেবারে কমে যাবে। এতে করে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে উপজেলা এলাকা। কিন্তু কিছু অসাধু কৃষক বেশি লাভের আশায় আবাদি জমিতে পুকুর খনন করছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর কবির বলেন, উপজেলার সরকারী পুকুর আছে ৩২টি ও বেসরকারী আছে প্রায় ৫ হাজার।এ সব পুকুর থাকলেও বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে ৮ হাজারের বেশি।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, আবাদি জমিতে পুকুর খনন করার কোন নিয়ম নেই। পুকুর খনন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কাউকে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। আইন অমান্যকারীকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ভূমি আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।