নড়াইলবাসী মাদকের নতুন আইনকার্যকর পুলিশের সকল টিম একযোগে কাজ শুরু : এসপি জসিম উদ্দিন

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ আজ শনিবার (৫ জানুয়ারী) সাবধান! নড়াইলের ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদক বিক্রেতা ও সেবন কারীরা নতুন আইন কার্যকর নড়াইলে ২৭ডিসেম্বর থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’অনুযায়ী নড়াইল জেলা পুলিশের সকল টিম একযোগে কাজ শুরু করছে জানিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম।

শনিবার (৫ জানুয়ারি) নড়াইলের পুলিশ সুপারের নিজস্ব কার্যালয়ে নতুন আইনের প্রায়োগিক বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার জন্য আয়োজিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন,(পিপিএম), নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, নানা কারণকে সামনে রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০’ প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করেছে। ২৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন এই আইন অনুযায়ী নড়াইল জেলা পুলিশের সকল টিম একযোগে কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন,‘এনপিএস নামে নতুন মাদক আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমাদের দেশে কোনো মাদক তৈরি না হওয়া সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক আসে। মাদক পাচার কারীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তৎপর রয়েছে। আইনগত দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোকরের কারণে প্রকৃত অপরাধীরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। তবে সংশোধিত আইনে সে সুযোগ থাকবে না।’ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলার মতো মাদক ঠেকাতেও সফল হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নতুন আইনে ইয়াবা পাচার ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২০০ গ্রামের বেশি এমফিটামিনযুক্ত ইয়াবা আটকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ড। আর গডফাদারদের জন্য মানি-লন্ডারিং মামলায় শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর যে কোনো নতুন মাদক আবির্ভাব ঘটলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ব্যবস্থা নিতে পারবে। পাঠ্যপুস্তকে মাদক বিরোধী বিষয় সংযুক্ত করা হলে কিশোর বয়স থেকেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য যে, নড়াইলের ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীরা নতুন আইন কার্যকর! মাদক দ্রব্য ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, পরিবহন, চাষাবাদ, উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ড। ক্ষেত্র বিশেষে মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হলেই একই সাজার আওতায় পড়বে।

মাদকের বিরুদ্ধে এ নতুন আইন “মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮” ২৭ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর থেকে ওইদিন আটক বা গ্রেফতার হওয়া মাদক বিক্রেতা, সেবনকারী, পাচারকারীসহ সংশ্লিষ্টরা নতুন আইনে মামলার আসামি হবেন। ইতোমধ্যে এ আইন কার্যকরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যা সকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)-দের নিকট এ নির্দেশনা পৌঁছে গেছে। চলতি বছরের গত ২৭ অক্টোবর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ সংসদে পাস হয়েছে। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নতুন এ আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

নতুন আইনের ৯ ধারায় বলা আছে, এ্যালকোহল ব্যতীত অন্যান্য মাদক দ্রব্যের উৎপাদনবা প্রক্রিয়াজাত করণে ব্যবহার হয় এমন কোনো দ্রব্য বা উদ্ভিদের চাষাবাদ, উৎপাদন, বহন, পরিবহন বা আমদানি-রপ্তানি, সরবরাহ, বিপণন, গুদামজাত, সেবন বা ব্যবহার, অর্থবিনিয়োগ বা পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না।

৩৬ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি আইনের এই বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

১১ ধারায় বলা হয়েছে, অনুমতি (পারমিট) ব্যতীত কোনো ব্যক্তি এ্যালকোহলপান করতে পারবেন না। চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন বা সরকারি মেডিকেল কলেজের কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে এ্যালকোহল পানের পারমিট দেওয়া যাবে না। তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তাড়ি ও পঁচুই এবং পার্বত্য জেলা বা অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি করা মদ পান করার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।

২৪ ধারায় বলা আছে, তদন্ত কর্মকর্তার যদি এই মর্মে সন্দেহ হয় যে, কোনো ব্যক্তি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রেখেছেন। সেই ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তা সন্দেহ জনক ব্যক্তির শরীরে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এ্যান্ডোসকপি এবং রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

৩৩ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি মাদকদ্রব্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থেকে অবৈধ অর্থ ও সম্পদ সংগ্রহে লিপ্ত রয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার এমন সন্দেহ হলে তিনি সন্দেহ জনক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব বা আয়কর নথি পরীক্ষার প্রয়োজনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণকরবেন।

১৯৯০ সালের মাদক আইনে বলা আছে, ৫০ গ্রাম মাদক পাওয়া গেলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১হাজার ৫৯৬ জনকে বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কারোরই মাদক আইনে মৃত্যুদণ্ড হয়নি।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর খুলনা জেলার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন-২০১৮ সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা সহজ হবে। কারণ নতুন এ আইনে মাদক সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।