নড়াইলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ আজ বুধবার (৯ জানুয়ারী) নড়াইলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জেলায় মোট ইটভাটা ৭০টি। তবে ইটভাটা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা অন্তত ৮৫। আর এসব ভাটার অধিকাংশেই কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট তৈরি মৌসুমের পাঁচ মাসে ভাটা গুলোয় জ্বালানির জন্য কাটা হচ্ছে ৫০ হাজারেরও বেশি গাছ। এছাড়া ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উপরিস্তরের মাটি।

উজ্জ্বল রায় জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অবৈধ হলেও নড়াইলের ভাটায় তা মানা হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, বছরে পাঁচ মাস ইট তৈরির মৌসুম থাকে। এ সময় প্রতিদিন একটি ভাটায় কাঠ প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫ মণ। গড়ে প্রতিটা গাছ থেকে চার-পাঁচ মণ কাঠ পাওয়া যায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছ কিনে তারা ইটভাটায় সরবরাহ করেন।

মৌসুমের পাঁচ মাস প্রতিদিন জেলার ইটভাটায় বিভিন্ন ধরনের তিন শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ হিসাবে এক মৌসুমে পোড়ানো হচ্ছে ৫০ হাজারেরও বেশি গাছের কাঠ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নড়াইল সদরের নড়াইল-কালনা সড়কের পাশে তালতলায় ও চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পাশে রয়েছে দুটি ইটভাটা। এছাড়া চালিতেতলা বাজারের পাশে একটি ও কালিয়া শুক্তগ্রাম পাটকেল বাড়ি মধুমতী নদীর তীরে রয়েছে তিনটি ইটভাটা। প্রতিটি ভাটায় পোড়ানোর জন্য মজুদ করে রাখা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাঠ। ভাটা গুলোর ১৫ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার ব্যারেল চিমনি দিয়ে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া।

নড়াইলের সিভিল সার্জন আসাদুজ্জামান মুন্সি দিপু বলেন, লোকালয়ে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হলে ধোঁয়ার কারণে ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ফলে জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেও জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দ্রুত ইটভাটা অপসারণ করা প্রয়োজন।

এদিকে বেশ কয়েকজন ভাটা মালিক জানান, একটি ইটভাটা গড়ে তুলতে কমপক্ষে পাঁচএকর জমির প্রয়োজন হয়। আর বড় আকারের ভাটা স্থাপনে প্রয়োজন হয় ৩০-৩৫ একর। একযুগ আগেও জেলায় ১৮-২০টি ভাটা ছিল। কিন্তু এখন এ সংখ্যা বেড়ে চার গুণ হয়েছে। আর কৃষকদের দাবি, এ পরিমাণ ভাটা স্থাপনে অন্তত ৪০০ একর ফসলি জমি ব্যবহার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটার ম্যানেজার জানান, মাঝারি আকারের একটি ভাটায় বছরে ৪০-৫০ লাখ ইট তৈরি হয়। প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। আর এ মাটির জোগান দেয়া হয় কৃষিজমি থেকে। ফলে প্রতিটি ভাটায় বছরে অন্তত সাত-আট একর জমির উপরি ভাগের মাটি লাগে।

এ বিষয়ে কথা হলে নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটা হলে সেই জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক।

নড়াইলে পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন সমাজকর্মী কাজী হাফিজুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কৃষি জমিও লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব ভাটায় স্বল্প উচ্চতার টিনের চিমনি দিয়ে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতি বছরই প্রশাসনের লোকজন কিছু ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে। তবে এতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না।

কথা হলে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ভাটায় অভিযান পরিচালনা করছি। আইন অমান্যকারী সব ইটভাটা মালিককে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।