বিপিএলকে সামনে রেখে সিলটের ক্রিকেট প্রেমীদের বাড়তি উন্মাদনা

আবুল হাসনাত, কানাইঘাট (সিলেট) প্রতিনিধিঃ গ্রীণ গ্যালারী সমৃদ্ধ সিলেট আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যে কোন খেলাধুলা সিলেটের স্টেডিয়াম গুলোতে হলে রেকর্ড সংখ্যাক দর্শক হয়| গেল বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ছিল বাংলাদেশ-উইন্ডিজ ক্রিকেট ম্যাচ। সেই ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেট প্রেমিদের ছিল উৎসব আর উল্লাস। সেই রেশ কিছুটা কেটে গেলেও, আবারও ক্রিকেট নিয়ে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রিকেট প্রেমিদের মধ্যে শুরু হয়েছে অপেক্ষা আর উম্মাদনা।

এবারের ক্রিকেট উম্মাদনাটা একটু ভিন্ন। কারণ দেশের একমাত্র ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। এ আসরে সাতটি দল দেশের তিন জেলার তিন ভেন্যুতে খেলবে। গেল ৫টি আসরের চেয়ে এবারের আসরে খেলছেন সবচেয়ে বেশি বিশ্ব সেরা ক্রিকেটাররা।

গতকাল শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ আসরটি শেষ হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারী। আসরের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ধাপ (১৫-১৯ জানুয়ারি) ৮ টি ম্যাচ অনুষ্টিত হবে সিলেটে। সে কারণে বিশ্ব সেরা ক্রিকেটাদের প্রিয় ভূমিতে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতির কমতি নেই সিলেটের ক্রিকেট প্রেমিদের। আর সিলেটে আগত ক্রিকেটারদেরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সিলেট পর্বের ম্যাচগুলো সুন্দর ভাবে সফল করতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর পক্ষ থেকে এমনটিই জানিয়েছেন, বিসিবি’র পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ষষ্ঠ আসর মাঠে গড়ানোর কথা ছিল গত বছর শেষের দিকে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। বিপিএলের আগের আসর গুলো হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। কিন্তু এবার নির্বাচনের কারণে প্রথমে বিপিএলের সূচি এগিয়ে অক্টোবরে করা হয়েছিল। পরে তা দুই মাস পিছিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নেয়া হয়। অবশেষে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সঠিক সময়েই শুরু হয়েছে বিপিএল।

শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উদ্বোধন ম্যাচে দুপুর সাড়ে ১২টায় মুখোমুখি হয় রংপুর রাইডার্স ও চিটাগং ভাইকিংস এবং বিকেল ৫টা ২০মিনিটে মাঠে নামে ঢাকা ডায়নামাইটস ও রাজশাহী কিংস। এবারের আসরে থাকছে সাতটি দল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এই তিন শহরে হবে ম্যাচগুলো। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ঢাকা পর্ব। এরপর ১৫-১৯ জানুয়ারি সিলেট পর্ব। ২১-২৩ জানুয়ারি আবার ঢাকা পর্ব। ২৫-৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম পর্ব। এরপর ফাইনাল সহ বাকি ম্যাচগুলো হবে ঢাকায়। দেশী-বিদেশী তারকারা অংশ নেয়ায় মুখর থাকবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট।

এবারের আসরে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় তারকা স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। সিলেট সিক্সার্সকে নেতৃত্ব দেবেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সহ-অধিনায়ক ওয়ার্নার। আর তামিম ইকবালের নেতৃত্বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে মাঠে নামবেন স্মিথ। এদিকে রংপুরের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন ক্যারিবীয়ান ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। মাশরাফি বিন মর্তুজার দলে আরো আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মারকুটে ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স ও অ্যালেক্স হেলসের মতো ক্রিকেটাররা। রোভম্যান পাওয়েল, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেলদেও দেখা যাবে ঢাকা ডায়নামাইটসের জার্সিতে। খুলনা টাইটান্সের হয়ে বিপিএল মাতাবেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, ডেভিড মালানরা। কুমিল্লায় স্মিথ ছাড়াও আছেন শহীদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরা, এভিন লুইস ও শোয়েব মালিকের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

সিলেটের ক্রিকেট প্রেমি আবুল হাসনাত জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আসর বিপিএল। সেই আসরের গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলো অনুষ্টিত হবে সিলেটে। ফলে আমাদের মধ্যে আনন্দের আর উচ্ছাস বিরাজ করছে। অপেক্ষা করছি কবে যে ১৫ জানুয়ারি আসবে। আর প্রিয় ক্রিকেটারদের খেলা ক্রীড়া নৈপূণ্য দেখবো। তার মতো সিলেটের সকল ক্রীড়ামোদি ও ক্রিকেট প্রেমিদের মাঝেও বিরাজ করছে ক্রিকেট উম্মাদনা।

উল্লেখ্য, ২০১২ বরিশাল বার্নাসকে ও ২০১৩ সালে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। দুবারই মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। ২০১৪ সালে মাঠে গড়ায়নি বিপিএল। এরপর ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় যথাক্রমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা ডায়নামাইটস ও রংপুর রাইডার্স। মজার ব্যাপার হলো আগের পাঁচটি বিপিএলের চারটিতেই জিতেছেন মাশরাফি। এবারো এমপি হিসেবে স্পটলাইট তার দিকেই বেশি। গতকাল থেকে চ্যাম্পিয়ন খুঁজবে ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখগুলো। অপেক্ষার অবসান হবে ৯ ফেব্রুয়ারি।

সিলেট সিক্সার্স
দেশি ক্রিকেটার: নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন ধ্রুব, তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ আল-আমিন হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, নাবিল সামাদ, এবাদত হোসেন, অলক কাপালি, জাকির আলি অনিক ও মেহেদি হাসান রানা।

বিদেশি ক্রিকেটার: ডেভিড ওয়ার্নার (অধিনায়ক), সোহেল তানভির, সন্দীপ লামিচানে, মোহাম্মদ ইরফান, গুলবাদিন নাইব, আন্দ্রে ফ্লেচার, ইমরান তাহির, নিকোলাস পুরান ও মোহাম্মদ নওয়াজ।

মোট ভেন্যু ৩টি,
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এবং সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম|

সিলেট পর্ব, দ্বিতীয় ধাপ (১৫-১৯ জানুয়ারি)
১৫ জানু, মঙ্গলবার, দুপুর ১২.৩০ : খুলনা টাইটান্স-রাজশাহী কিংস, বিকাল ৫.২০ : সিলেট সিক্সার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
১৬ জানু, বুধবার, দুপুর ১২.৩০ : ঢাকা ডায়নামাইটস-রাজশাহী কিংস|