ভোলার চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় কিশোর নির্যাতনের ভিডিও-ছবি ফেসবুকে ভাইরাল

কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার শশীভূষণ থানাধীন হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে মুরগী চুরির অপবাদে রুবেল (১৪) নামের এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রকাশ্যে বেঁধে পেটালেন এক ইউপি সদস্য আমজাদ।

এ ঘটনার ভিডিও-ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাত ও পায়ের মাঝে লাঠি বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় এ নির্যাতন করা হয়। ওই কিশোর হাজারীগঞ্জ ৯নং ওয়ার্ডের আঃ মালেক এর ছেলে। নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য আমজাদ একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় রুবেলের মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে ইউপি সদস্য আমজাদসহ ৬ জনকে আসামী করে ১৮ জানুয়ারী শশীভূষণ থানায় একটি মামলা দয়ের করেছে। যার মামলা নং ১৩/২০১৯ ইং।জানা গেছে, বুধবার (১৪ নভেম্বর) গভীর রাতে কিশোর রুবেলের প্রতিবেশি কবির তালুকদার এর ১টি মুরগী চুরির অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য আমজাদ এর কাছে অভিযোগ দায়ের করে।

অভিযোগের আলোকে ইউপি সদস্য আমজাদ তার দলবল নিয়ে রুবেলকে সন্দেহজনক ভাবে মেঘনা নদীর পাড় থেকে ধরে বাড়ির কাছে হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাত ও পায়ের মাঝে লাঠি বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় চতুরপার্শে দলবলসহ ঘিরে রেখে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে।

রুবেলের মা বিলকিস বেগম বলেন, আমার ছেলে রুবেল নৌকায়বাবুর্চি কাজ করে। ঘটনার দিন বাড়িতে আসলে প্রতিবেশী ছেলেরা মিলে বনভোজন করার জন্য কবিরের বৌয়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকায় মুরগি কিনে, কিন্তু পূর্ব থেকে প্রতিবেশী কবিরের সাথে বিরোধ থাকায় মুরগি চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে পিছমোড়া বাঁধদিয়ে মারধোর ও জখম করে এবং আমার স্বামী মালদ্বীপে থাকায় আমাকে বিভিন্নভাবে অসামাজিক কাজের অভিযোগ দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছে। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে যারজন্য আমরা কারো কাছে মুখ খুলে বিচার দিতে পারিনাই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আমজাদ বলেন, আমি মুরগী চুরির কঠিন বিচার করেছি। বিচার করতে গেলে একটু আধটু মারধর করতেই হয়।এ ঘটনায় হাজারিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম বলেন, আমরা সালিশ করে মিমাংসা করতে পারি, কিন্তু কাউকে মারার অধিকার আমাদের নেই। এ ঘটনা আমার জানা ছিলনা, ঘটনার পর আমি জানতে পেরেআমি ভিক্টিমকে আইনের আশ্রয় পেতে থানায় অভিযোগ দিতে বলি।

শশীভূষণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ভিডিও-ছবি আমার কাছে আছে। এ ঘটনায় শশিভূষণ থানায় শিশু আইন ২০১৩ এর ৭০ ধারায় শিশু নির্যাতনে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসামীদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে। ভোলার শশীভূষনে চুরির অপবাদে কিশোর নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্টের উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ।