মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে জমি দখল করে চলছে লবণের চাষ

জসিম উদ্দীন জিহাদ, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার মহেশখালী মাতারবাড়ীর উত্তর পাশে দ্বিতীয় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহনকৃত জমিতে দখল করে চলছে লবণের চাষ। শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদনও।

এ অবস্থায় কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ উক্ত লবণ উৎপাদনের কাজ বন্ধ করার আজ ৯ জানুয়ারী বুধবার এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করে দেবার সীদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। এতে মাথায় হাত দিয়েছেন চাষীরা।

সূত্র জানায়, কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প উৎপাদনের জন্য মাতারবাড়ীতে ১৪ শত ১৪ একর জমি অধিগ্রহন করার পর ২০১৫ সাল থেকে সেখানে চলছে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ।

অপরদিকে মাতার বাড়ীর উত্তর পাশে আরো একটি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প করার জন্য ১২ শত একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত প্রকল্পে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু না করায় একটি অসাধু সিন্ডিকেট চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতাধীন ৭টি ঘোনা থাকলে ও পরিজান ঘোনা, লম্বাঘোনা, দোনা ঘোনা ও ফার্ম ঘোনা চলতি লবণ মৌসুম ও আগামী বর্ষা মৌসুমের জন্য মালিকদের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন কাসেম, শরিয়ত উল্লাহ, রুস্তম ও মৌলভী বদরুদ্দোজা। এ ৪টি ঘোনা ইজারা দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে মাষ্টার রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়। বাকী কানকাটি ঘোনা ও খোদার কুম ঘোনা নিজেরাই করবেন এমনটা জানাগেছে।

সূত্রে জানা যায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব স্ব-স্ব ইজারাদাররাই করবেন। কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ এ সংবাদ পেয়ে লবণ উৎপাদন কাজ বন্ধ করার জন্য গত ৬ জানুয়ারী মাতারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি তৎক্ষনিকভাবে সমাধান করার জন্য লবণ চাষী ও জমিনের মালিকদের সাথে বসলেও কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ থেকে কোন সিন্ধান্ত দিতে পারে নি বিদায় গত ৭ জানুয়ারী স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে কোল পাওয়ার এর স্থানীয় ক্যাম্পে জরুরী এক বৈঠক বসলে ঘোনার ইজারাদার, ডাককারী ও জমিনের মালিকরা এখন নড়ে-চড়ে বসতে শুরু করেছে।

এদিকে ৪টি ঘোনার ইজারা কমিটির সভাপতি মাষ্টার রফিকুল ইসলাম থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্ব-স্ব জমিনের মালিকরা লবণ চাষ করছে। লবণ মৌসুম ও আগামী চিংড়ী মৌসুমের জন্য কোন ঘোনা ইজারা দেয়া হয়নি। এছাড়া আমাকে ইজারা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বিষয়টি সত্য নয়। অপরদিকে কোল পাওয়ারের মাতারবাড়ী শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লবণ উৎপাদন থেকে বিরত থাকার জন্য ৯ জানুয়ারী মাতারবাড়ীতে মাইকিং করে বার্তা জানিয়ে দেয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছেন।

অন্যদিকে আওয়ামীলীগ নেতা ও বিশিষ্ঠ লবণ এবং চিংড়ি ব্যবসায়ী কাউসার সিকদার জানান, মাতারবাড়ী টুঙ্গি পাড়া নামে খ্যাত। আমরা মাতারবাড়ীবাসী প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে এখানকার আয়ের উৎস লবণ ও চিংড়ী জমি ছেড়ে দিয়েছি। এছাড়া সদ্য ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে মাতারবাড়ীবাসী বিপুল ভোট দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করেছেন। কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রকল্পে এখনো কোন ধরণের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করেনি বিদায় আমরা রপ্তানি শিল্পকে বেঁচে রাখতে এলাকার মানুষের মুখে অন্ন জোগানোর তাগিদে এখন লবণ চাষ করছি। সরকারের প্রয়োজনে আমরা যথা সময়ে ছেড়ে দেব।

তবে অত্র প্রকল্প এলাকার জমিনের মালিকরা এখনো শতকরা ৭০% লোক তাদের জমিনের মূল্য পায়নি বলেও জানান স্থানীয়রা।