‘মানুষ বিক্রির হাটে’ ক্রেতা নেই

সালেকিন মিয়া সাগর, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ বাজারের নাম, ‘মানুষ বিক্রির হাট’। দূর দূরান্তের মানুষ এই নামেই চেনে বাজারটাকে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদাহ বাজারে এর অবস্থান। এখানে মানুষ বিক্রি হয়। মূলত মানুষের শ্রম বিক্রি হয় এই বাজারে।

কয়েক দিন আগেও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জড়ো হতো এ হাটে। ভোর থেকে সকাল ৭টা ৮টার মধ্যে শত শত মানুষের দেখা মিলতো। ক্রেতা বিক্রেতার দর-কষাকষিতে বিক্রি হয়ে যেত শ্রমজীবী মানুষ। যারা শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তীব্র শীত চুয়াডাঙ্গার মানুষ বিক্রির সেই হাটের চিরচেনা দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে একেবারেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদাহ বাজারটি মানুষ বিক্রির হাট হিসেবেই চেনে চুয়াডাঙ্গাসহ আশ পাশের জেলা গুলোর মানুষ। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে এ হাটে শত শত লোক জড়ো হয়। হাতে কোদাল, কাঁধে ঝুড়ি আরো কাজ করার নানা সরঞ্জাম নিয়ে নিজেদের শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করেন তারা।

রহমত আলী জানান, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মালিক-কর্তা গোছের কিছু মানুষ আসেন। যাচাই বাছাই করে সঙ্গে নিয়ে যান শ্রমিকদের। প্রতিদিন এ হাট থেকে চার-পাঁচশ’মানুষ বিক্রি হয়। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গায় মানুষ বিক্রির হাটে চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। বেচা কেনা কমেও গেছে একেবারেই। আর এতে করে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রতিদিন শ্রম বেচতে আসা প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে এমন মন্দাভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। সোমবার সকালে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায় শত শত শ্রমিক কাজের জন্য অপেক্ষা করছে। কথা হয় সদর উপজেলার জালশুকা গ্রামের শাহাজান আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, গত ২২ বছর ধরে তিনি এ হাটের মাধ্যমে শ্রম বিক্রি করেন। মাটি কাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করে থাকেন তিনি। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা হারে পান শ্রমের দাম। গত চার দিনে কোনো ক্রেতা পাননি। শীতের কারণে এ হাটে ক্রেতারা আসছেন না বলে জানান তিনি।

দিনমজুর আশফাক আলী বলেন, গরমের সময় আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। শীত আসলেই আমাদের কাজ কমে। ফলে শীতের সময়টায় ঘরে অভাব অনটন শুরু হয়।

দিনমজুর শমসের আলীর বয়স পঞ্চাশের বেশি। তিনিও এসেছেন কাজের সন্ধানে। তিনি বলেন, আমার জমি জামা বলতে কিছুই নেই। শ্রম বিক্রি করেই সংসার চালাই। বাড়িতে স্ত্রী ছেলে মেয়েসহ ৪ জনের সংসার। কাজ করলে সংসার চলে। কাজ না পেলে অনাহারে অর্ধহারে থাকতে হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস জানান, মানুষ বিক্রির হাটের কথা আমি শুনেছি। এলাকার মানুষের আর্থিক অভাব অনটনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।