মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যতো সহযোগিতা লাগে করবো : এম.এ মান্নান

আশিস রহমান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যতো সহযোগিতা লাগে করবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের প্রত্যেককে আপোষহীনতার দিকে যেতে হবে। আমার বিশ্বাস সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে প্রাণে ধারণ করবেন এবং কাজে প্রতিফলন ঘটাবেন।’

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ বোর্ড অব ট্রাস্টি কর্তৃক আয়োজিত গুণীজন সম্মাননা-২০১৯ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় পরিকল্পনা মন্ত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফের স্মৃতি সংরক্ষণার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ বোর্ড অব ট্রাস্টির মেম্বার মোহাম্মদ ইয়াকুব বখত’র সভাপতিত্বে ও জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় গুণীজন সম্মাননা-২০১৯ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে দিয়েছিলেন বলেই আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক অর্থ গবেষণা সংস্থা বলছে বিশ্বের ৫টি সম্ভাবনাময় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যতোদিন টিকে ততোদিন মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান নিয়ে বেচেঁ থাকবেন।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা চেতনার সত্যিকারের ধারক, বাহক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ইতিহাস আগামী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঠাগার ও জাদুঘর তৈরি করেছে। গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের আজকের এই আয়োজন সুনামগঞ্জকে, মুক্তিযোদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘আমি মনে করি সুনামগঞ্জের মানুষ অত্যন্ত সাহসী মানুষ, তারা বীর যোদ্ধা। আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মৃতিচারণ তাই মনে করিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন প্রজন্মের তরুণরা দেশ গড়ার যুদ্ধে সামিল হবে।’

পৌর সভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ বেচেঁ থাকুক দীর্ঘদিন। আমি গর্ববোধ করি আমার বাবা হোসেন বখতসহ তিন ভাইবোন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন সবাই জানতে পারে এজন্য শুধু জেলা পর্যায়ে নয় উপজেলা পর্যায়েও গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’

বাঁশতলা সাব-সেক্টর কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব.) এ.এস. হেলাল উদ্দিন পি.এস.সি বলেন, ‘ মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই ছিলো যুবক, গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রচুর দেশপ্রেম ও সাপোর্ট ছিলো যেকারণে অসংখ্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মানু‌ষের সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সবাইকে উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করা।’

বাঁশতলা সাব-সেক্টরের সহ-অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব.) আব্দুর রউফ বীর বিক্রম স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের কবর রচনা করে আমরা মরতে চাই। ৭১ সালে সুনামগঞ্জ আমাদেরকে বাংলার মানুষের কাছে পুনর্জন্ম দিয়েছিল। সুনামগঞ্জ আমাকে কিছু সাহসী সহযোদ্ধা দিয়েছিল। এ অঞ্চলে যুদ্ধের নেতৃত্বে দিয়েছিলাম আমি। এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার কারণে দ্রুত বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত প্রত্যেকটি গ্রামে স্মৃতি ফলক দিতে চাই।’

মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ বলেন, ‘বাঙালিরা শুধু স্বাধীনতা অর্জন করতেই জানেনা অন্যান্য জাতিকেও স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করতে জানে। সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতে হবে।’

গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ কর্তৃক আয়োজিত গুনীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ ‘র সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। পরে গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ ‘র পক্ষ থেকে ১০ জন অসহায় মেয়েকে সেলাই মেশিন বিতরণ এবং একজন শিক্ষা সংগ্রামীকে সহায়তা প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে আছকির মিয়া, শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, সাহিত্য সংস্কৃতিতে দেওয়ান মহসিন রাজা চৌধুরী (মরনোত্তর), ক্রীড়া ক্ষেত্রে নাজির আহমেদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও সততার জন্য মুক্তিযোদ্ধা উজির মিয়া (মরনোত্তর) এবং সমাজসেবায় মনেছা বেগমকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ও তাদের হাতে বিশেষ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে প্রবাসী সাংবাদিক রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু কর্তৃক সম্পাদিত “কমরেড প্রসূনকান্তি বরুণ রায়” স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।