ম্লান হলো বই উৎসব : সেশন ফি বাকি থাকায় বই পেলনা শিক্ষার্থীরা

খালিদ হাসান, বগুড়া প্রতিনিধিঃ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্য নতুন বই বিতরণ উৎসবের জোয়ারে যখন ভাসছে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা তখন সেশন ফি পরিশোধ না করায় বই উৎসব হয়নি বগুড়ার একটি বিদ্যালয়ে। নতুন বই না পেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিলও করে। কিন্তু তার পরেও কর্তৃপক্ষ বই বিতরণ না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মঙ্গলবার বগুড়া সদরের সাতশিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদে কাছে বই বিতরণ না করার খবর পেয়ে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব মোর্শেদ ওই বিদ্যালয়ে ছুটে যান। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব মোর্শেদ জানান, তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন।

জানা যায়, বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সাতশিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রায় ৬০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এদের মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৫০০ শিক্ষার্থীকে বছরের প্রথম দিন নতুন বই বিতরণের কথা। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় বইও সরবরাহ করা হয়েছে।

নতুন বই পাবার জন্য সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে সমবেত হতে শুরু করে। কিন্তু বিদ্যালয়ের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় সেশন ফি পরিশোধ ছাড়া কাউকে নতুন বই দেওয়া হবে না। মাইকে বার বার এ ঘোষণা দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক হাফিজার রহমানের সঙ্গে দেখা করে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নতুন বই দাবি করে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাতে রাজি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে তাদের বাবা-মাসহ অভিভাবকরাও বিদ্যালয়ে হাজির হতে শুরু করে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও বই বিতরণ না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কর্তৃপক্ষ এক পর্যায়ে সহযোগিতার জন্য বগুড়া সদর থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মোর্শেদুল ইসলাম অভিযোগ করে, সেশন ফি’র ৬০০ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে নতুন বই দেওয়া হয়নি। দুলালী বেগম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে মুক্তা ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সেশন ফি ছাড়া বই দেবে না- বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত জানার পর তার মেয়ে বাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে।

তিনি বলেন, ওই সময় আমার কাছে ও ৬০০ টাকা ছিল না। কিন্তু মেয়ের কান্নাকাটি দেখে আমি একজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে সেশন ফি দিয়ে বই সংগ্রহ করেছি।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, সাতশিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সেশন ফি এবং বকেয়া বেতন পরিশোধ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়া হচ্ছে না-এমন অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। খবর পাওয়ার পর আমরা সেখানে পুলিশ পাঠাই।

তবে সাতশিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজার রহমান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে বই দিয়েছি।’ সেশন ফি পরিশোধ ছাড়া নতুন বই দেওয়া হবে না- মাইকে এ ধরনের ঘোষণা কেন দেওয়া হলো আর শিক্ষার্থীরা কেনইবা উত্তেজিত হয়ে পড়লো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাইকে আমরা নতুন বই নিতে শিক্ষার্থীদের ডাকাডাকি করেছি।’

এ ব্যাপারে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, অভিযোগটি তারা সরেজমিন তদন্ত করেছেন। এ বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমরা যে অভিযোগ পেয়েছি সেটি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।