সংরক্ষিত নারী আসনের এমপির দৌড়ে তৎপর শেরপুরের ৫ নেত্রী

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধিঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই সারাদেশের ন্যায় শেরপুরে এবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি কে হবেন তা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।

সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে তৎপর রয়েছেন শেরপুরের মহিলা আওয়ামী লীগের ৫ নেত্রীর নাম। তারা হচ্ছেন দশম সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি এডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী, জেলামহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শামছুন্নাহার কামাল, সাধারণ সম্পাদক নাসরিন রহমান, জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এডভোকেট ফারহানা পারভীন মুন্নী ও আদিবাসী নারীনেত্রী রবেতা ম্রং। তারা সবাই স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদী।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে কেবল দশম সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে শেরপুর থেকে প্রথমবারের মতো এমপি মনোনীত হন জেলা যুব মহিলাআওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী। দলীয়সূত্র জানায়, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম রেজার একমাত্র কন্যা, যুবনারী শিল্পদ্যোক্তা শ্যামলীর ওই মনোনয়ন প্রাপ্তিতে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব শীলদের ভূমিকা থাকলেও রাজনীতিসহ নানা সমীকরণে এক সময় দূরত্ব বেড়ে যায় তাদের সাথেই। তবে সাংসদ শ্যামলী নিজের অবস্থান থেকে রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করেছেন।

নানা উৎসব-পার্বণ, শীত ও দুর্যোগে হাত বাড়িয়েছেন আর্তমানবতার সেবায়। সেই সুবাদে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও রেখেছেন ভূমিকা। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মনোনয়ন না পেয়েও শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। ওই অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি মনোনীত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

এবার শেরপুর থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শামছুন্নাহার কামাল। দলীয় সূত্র জানায়, শামছুন্নাহার কামালের হাত ধরেই শেরপুরে উৎপাদনশীল-গণমুখী মহিলা আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়।

তিনি মহিলা আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠিত করার পাশাপাশি ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনে সবসময় রাজপথে অগ্রভাগে থেকে সাহসিকতার সাথে কাজ করেছেন।

অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার সমীকরণে তিনিই দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপি হচ্ছেন-তৎকালীন এমন গুঞ্জনটিই ছিল রাজনৈতিক অঙ্গণে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি হয় ভিন্ন সমীকরণে। দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত শেরপুর শহরে বসবাসের সুবাদে একটি অন্যতম প্রধান প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন এবং পরবর্তীতে আইডিয়াল ইসকুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার পরও তার বিষয়ে ‘বকশীগঞ্জের মেয়ে’বিতর্ক ও ‘মতিয়া চৌধুরীর লোক’ বলে বিদ্বেষ ছড়ায় দলের একটি অংশ।

আর সেই রাজনীতির গ্যাড়াকলে তার মতো ত্যাগী, পরীক্ষিত ও পরিচ্ছন্ন একজন নারীনেত্রীকে বঞ্চিত ও হতাশ হতে হয়। এরপরও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সব সময়ই থেকেছেন সক্রিয়। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও বিচরণ করেছেন শহর থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন তিনি। মনোনয়ন না পেয়েও কোন কষ্ট না রেখে নৌকা পক্ষে কাজ করেছেন সদরসহ ৩টি আসনেই। তাই এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিশাল বিজয় ও চমকের মন্ত্রীসভা গঠনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানে শামছুন্নাহার কামাল প্রবল আশাবাদী।

তার মতে, এবার চমকের সংসদে ক্ষেত্রমতে দু’চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপিদের থাকার সম্ভাবনা নেই বলেই শোনা যাচ্ছে। কাজেই যোগ্যতা ও মাঠ পর্যায়ের অবস্থানের মূল্যায়ন হলে তিনিই হবেন শেরপুর থেকে এবারের নারী এমপি।

শেরপুর থেকে নারী আসনে এমপি হতে এবারও জোর তৎপরতায় রয়েছেন জেলামহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসরিন বেগম ফাতেমা। দীর্ঘ দিনযাবত দলীয় দায়িত্বের সুবাদে মহিলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের বিভিন্ন পর্যায়েই রয়েছে তার পরিচিতি ও অবস্থান।

তিনি কেবল দশম জাতীয় সংসদে নারী আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীই ছিলেন না, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শ্বশুর বাড়ির সূত্রে শেরপুর-৩(শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) সাধারণ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন।

সেই সুবাদে দু’টি উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়সহ শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তার বিচরণ, পরিচিতি ও অবস্থান তৈরি হয়। অবশেষে মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। তাই নিজের অবস্থানের কারণেই এবার তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি মনোনয়নের দাবিদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সদর আসন থেকে টানা ৫ দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সদ্য সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপির আশির্বাদ পেতে পারেন বলে দাবি তার সমর্থকদের।

এদিকে পরিবর্তিত অবস্থায় একই দাবি করছেন নারী আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এডভোকেট ফারহানা পারভীন মুন্নীর সমর্থকরাও। শেরপুরে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এডভোকেট নূর মোহাম্মদের নাতনী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এডভোকেট মুন্নী জেলা ছাত্রলীগের সাবেকসহ-সভাপতি, সদর উপজেলা বিআরডিবির টানা ৪ দফায় নির্বাচিত সভাপতি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

সেই সুবাদে রাজনৈতিক, সামাজিক অঙ্গণসহ সকল স্তরের মানুষের মাঝে তার পরিচিতি ও অবস্থানও রয়েছে। আর ওইসব কিছুকে পুঁজি করে তারুণ্যদীপ্ত ও চৌকসসংসদ সাজানোর আওতায় তিনিও আশা করছেন এবার নারী আসনে এমপি মনোনয়ন পাবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদে নারী আসনে মনোনয়ন দৌড়ে থাকা প্রার্থীদের তালিকায় হঠাৎ করেই চমক হিসেবে উঠে এসেছে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীর আদিবাসী নারীনেত্রী রবেতা ম্রংয়ের নাম। কর্মজীবনে তিনি ঝিনাইগাতী উপজেলার হাজী অছি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।

দীর্ঘদিন সফলতার সাথে উপজেলা ট্রাইবালওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জেলা খেলাঘর আসরের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক রবেতা ম্রং একজন গুণী সংগীত শিল্পীও। তাই এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন চমকের সংসদে আদিবাসীদের পাশাপাশি তৃণমূলের কর্মীদের মূল্যায়নের প্রশ্নে তিনিও নারী আসনে মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। উল্লেখ্য, একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ৫০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।