সাগরদাঁড়ীতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদূন দত্তের ১৯৫ তম জন্মজয়ন্তী

আজিজুর রহমান / সোহানা ফেরদৌস সুইটি, কেশবপুর প্রতিনিধি: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবক্ত কেশবপুর সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ তীরে মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের ১৯৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামী ২২ জানুয়ারী থেকে ৭ দিন ব্যাপি শুরু হচ্ছে মধু মেলা।

এদিকে মধু ভক্তদের আকর্ষনীয় করার জন্য মধু মেলায় সার্কাস, কৌতুক, মৃত্যুকুপ, নাগোরদোলা এবং মধু মঞ্চে নাটক, যাত্রাপালা নিত্যসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন। এ ছাড়া মেলায় বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন প্রকারের স্টল বসবে।

ইতিমধ্যে মেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানূর রহমান পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মেলা উপলক্ষ্যে স্টল বরাদ্দ শুরু হয়েছে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে স্টল বরাদ্দ করা হবে। এছাড়া বিস্তারিত তথ্যের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানূর রহমানের কার্যালয়ে যোগাযোগের অনুরোধও করা হয়।

কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারী জন্ম গ্রহন করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ, প্রাণের কবি, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সাগরদাঁড়ি গ্রামের স্থানীয় জমিদার পিতা রাজ নারায়ন দত্ত আর মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে সোনার চামচ মুখে নিয়ে বাঙ্গালীর প্রিয় কবি এই পৃথিবীতে আর্বিভূত হন।

প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শষ্য সম্ভারে সম্বৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়িরপাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে তার সুধা পান করে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিনত যুবক হয়ে উঠেন। কপোতাক্ষ নদ আর মধুসূদন” দু’জনার মধ্যে গড়ে উঠে ভালবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন।

মধুকবি ১৮২৪ সালে যখন জন্ম গ্রহন করেন সে সময়ে আজকের এইমৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদ কাকের কালো চোখের মত স্বচ্ছ জলে কানায় কানায় পূর্ন আর হরদম জোঁয়ার ভাটায় ছিল পূর্ণ যৌবনা। নদের প্রশস্ত বুক চিরে ভেসে যেত পালতোলা সারি সারি নৌকার বহর আর মাঝির কন্ঠে শোনা যেত হরেক রকম প্রাণ উজাড় করা ভাটিয়ালী ও মুর্শিদি গান।

শিশু মধুসূদন এ সব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখত আর মুগ্ধ হয়ে যেত। স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের অবিশ্রান্ত ধারায় বয়ে চলা জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে কবি রচনা করেন সেই বিখ্যাত সনেট কবিতা‘কপোতাক্ষ নদ’। ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে’।

ছেলে বেলায় নিজ গ্রামের এক পাঠশালায় মাওলানা লুৎফর রহমানের কাছে শিশু মধুসূদন তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পাশাপাশি গৃহ শিক্ষক হরলাল রায়ের কাছে বাংলা ও ফারসি ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু গাঁয়ের পাঠশালায় তিনি বেশি দিন শিক্ষালাভ করতে পারেননি। আইনজীবি পিতা রাজ নারায়ন দত্ত কর্মের জন্য পরিবার নিয়ে কলকাতার খিদিরপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

এখান থেকে ইংরেজী ভাষার প্রতি দূর্বল হয়ে পাড়ি জমান পশ্চিমা দেশ ফ্রান্সে। অবস্থান করেন ভার্সাই নগরীতে। বিদেশী ভাষায় জ্ঞানার্জন করার পাশাপাশি এখানে বসেই তিনি রচনা করেন বাংলায় সনেট বা চর্তুদ্দশপদী কবিতা। সেখানে চলাফেরার এক পর্যায়ে মধুসূদন পর্যায়ক্রমে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ জীবনে ভয়ংঙ্করভাবে অর্থাভাব, ঋণগ্রস্থ ও অসুস্থতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। ফিরে আসেন আবারো কলকাতায়। এসময় তার পাশে ২য় স্ত্রী ফরাসি নাগরিক হেনরিয়েটা ছাড়া আর কেউ ছিল না।

এরপর সকল চাওয়া পাওয়াসহ সকল কিছুর মায়া ত্যাগ করে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার একটি হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পেছনে ফেলে রেখে যান একগুচ্ছ মনোকষ্ট আর অভিমান। মহাকবির মৃত্যুর পর ১৮৯০ সালে কবির ভাইয়ের মেয়ে মানকুমারি বসুসাগরদাঁড়িতে প্রথম স্মরণ সভার আয়োজন করেন। সেই থেকে শুরু হয় মধুজন্মজয়ন্তী ও মধুমেলার।

কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহিন জানান, মেলার মাঠেকোন রকম বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানূর রহমান বলেন, মধুমেলায় কোন প্রকার অশ্লীলতা সহ্য করা হবে না। প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্ববধানে অনুষ্ঠিত মধুমেলাকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

প্রতিবারের ন্যায় এখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ডিবি, জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সাথে প্রয়োজন মতো সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব-৬ এরটহল বলবৎ থাকবে। এছাড়া মাঠে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। স্থানীয় ভাবে শতাধিক যুবকদের নিয়ে তৈরি করা হবে সেচ্ছা সেবক বাহিনী।