হবিগঞ্জের আলোচিত তন্নী হত্যায় প্রেমিক রানুর মৃত্যুদন্ড

নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বহুল আলোচিত কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়কে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা মামলার আসামী রানু রায়কে মৃত্যুদন্ড- দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (৭ জানুয়ারি) দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ সিলেট এর বিচারক রেজাউল করিমের আদালতে এ রায় দেন। বিভাগীয় স্পেশাল পিপি কিশোর কুমার কর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে আইনগত যুক্তি উপস্থাপন করেন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক বছর সাত মাস পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

তন্নী রায়ের বাবা বিমল রায় জানান, আমার মেয়ে তন্নীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামী মৃত্যুদন্ড দেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ঠ। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করার জোরদাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে তন্নী রায় নবীগঞ্জ শহরতলীর শেরপুর রোডস্থ ইউকে আইসিটি ইন্সটিটিউট কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেড় হয়ে আর ফেরেনি। তার নিখোঁজের ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন তন্নী রায়ের বাবা বিমল রায়। সাধারণ ডায়েরী করার ৩ দিনের মাথায় কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের বস্তাবন্দি লাশ নবীগঞ্জ শহর তলীর একটি নদী থেকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।

২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টার দিকে বরাক নদীতে তন্নীর বস্তাবন্দি লাশ ভেসে উঠে। লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় কেউ লাশ সনাক্ত করতে পারেনি। পরে লাশের সাথে পাওয়া একটি চাবি দিয়ে তন্নীর সুকেজের তালা খুলার পর নিশ্চিত হয় উদ্ধারকৃত লাশটি তন্নীর। এর পর থেকে হত্যাকারীদের খুজে মাঠে নামে পুলিশ। সন্দেহের ছুটে যায় প্রেমিক রানু রায়ের দিকে।

এ ঘটনায় রানুর পিতাকানু রায় সহ পরিবারের সবাই বাসায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করেছিল। পুলিশ ঘরের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বস্তা ও ডিসের তার জব্দ করে। একই রকম বস্তা ও ডিসেরতার তন্নীর লাশের সাথে পাওয়া যায়। এদিকে রানু পালিয়ে যায় ঢাকায়। সেখানে ফুটপাতে কাজ করতো। পুলিশের ভয়ে বন্ধ করে দেয় নিজের ব্যবহৃত মোবাইল। তার বাবা কানু রায়ও তার মোবাইলটি বন্ধ রাখে। প্রয়োজনে অন করে কথা বলতো। ফলে রানু রায় বা পরিবারের কারো সাথে তার যোগাযোগ ছিলনা।

রানু প্রয়োজনে দোকান থেকে তার নিকট থাকা লিষ্ট থেকে নাম্বার বের করে ফোন করতো। ২/৩ দিন পূর্বে রানু তার পিতার নম্বরে ফোন দেয়। এ সময় ভাগ্যক্রমে পেয়ে যায় পিতাকে, কথা হয় তাদের। এ সময় রানু জানতে পারে পরিবারের সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ সময় রানু মনে দাগ কাটে। তার কারণে পরিবারের সবাই কষ্ট করছে। এতে সে স্থির করে আত্মসমর্পন করবে।

এদিকে পুলিশ রানু তার তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতারে সর্বত্র জাল বিস্তার করে। এরই মধ্যে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের এর নিকট খবর আসে রানু বি-বাড়িয়া শহরের বাদুঘর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় রয়েছে। তৎকালীন ডিবির ওসি বর্তমান চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজমিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বি-বাড়িয়া শহরের বাদুঘর বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে রানু রায়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।