আবারও কাশ্মীরে কারফিউ, বিদ্রোহী হয়ে উঠছে বাসিন্দারা

কথায় কথায় কারফিউ, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি আর নিরাপত্তা অভিযানের নামে নাগরিক হয়রানি চলে হরদম। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার খক্ষ। আর এই কঠোর দমন-পীড়নের তোপে দিনে দিনে বিদ্রোহী হয়ে উঠছে কাশ্মীরের বাসিন্দারা।

গত বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামা শহরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার পরও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে কাশ্মীর জুড়ে। ওই দিনের হামলায় ৪৬ জন জোয়ান নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আবারও কাশ্মীরে কারফিউ জারি করেছে ভারত। আর এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুরনো এ চিত্রই দেখে আসছে কাশ্মীরিরা। তাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।

এদিকে শুক্রবার ভারতের দ্য প্রিন্ট জানায়, আর বুলেট নয়, তারা কাশ্মীরের আজাদ (স্বাধীনতা) চায়। কাশ্মীরের ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার রয়েছে। আর এ অঞ্চলটিতে ৭০ শতাংশ মুসলমানের বাস। কাশ্মীরের জনগণের একটি বড় অংশ স্বাধীনতা চাইলেও ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর দখল করে রেখেছে।

কাশ্মীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আশির দশক থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে তরুণ-যুবকরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া’ যুবারা এখন অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে ভারত। এতে প্রায় প্রতিদিনই দু-চারজন যুবক হত্যার শিকার হচ্ছেন।

বিক্ষোভ রুখতে ২০১০ সাল থেকে পেলেট গান (ছররা গুলি)। ছররা বন্দুকের গুলির মতো মারণাস্ত্র নয় এ ছরর। তবে একেকটি শেলের মধ্যে ছোট ছোট পাঁচ শতাধিক লোহার বল থাকে। ২০১১ সালে অনন্তনাগে ১৪ বছরের এক বালক পেলেট গানের আঘাতে আহত হয়। সে এখনও হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে।

হাসপাতালের বেডে কাতরাতে কাতরাতে সেই বালক বলেছিল, ‘সেনাদের গুলিতে মরতে চেয়েছিলাম আমি। আমার শাহাদাত কাশ্মীরিকে আজাদি এনে দেবে। আজাদি না দেখে যেতে পারলেও কোন আফসোস নেই। কারণ এতে অন্তত এ জীবন্ত কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারব।’

কাশ্মীর সরকারের এক তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে আট শতাধিক কাশ্মীরি চোখে আহত হয়েছিলেন। আর ২০১৮ সালে ভারতীয় বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে ১২০০-এর বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুর চোখে ছররার গুলি লেগেছে। যাদের মধ্যে শতাধিক কাশ্মীরির এক বা উভয় চোখ অন্ধ হয়ে যায়।