জামায়াতে ইসলামীকে নাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং সংস্কারের পক্ষে তার খোলামেলা বিবৃতিতে দলের বিভিন্ন স্তরে বেশ নাড়া দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিবিসিকে বলেছেন। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চেষ্টা করছেন সংস্কারের দাবি এখনই যাতে খুব বেশি মাথা চাড়া না দিতে পারে। সম্ভবত সে কারণেই ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলে সংস্কারপন্থী হিসাবে পরিচিত একজন কেন্দ্রীয় নেতা, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মজিবুর রহমান মঞ্জুকে দলে থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এরপর শনিবার দিনাজপুর জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াতের একজন আমীর বখতিয়ার উদ্দিন নিজ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং তার বক্তব্য শুনে তার মনে হয়েছে জামায়াতে ইসলামী একটি স্বাধীনতা বিরোধী দল এবং সে কারণে তিনি এই দলে থাকতে চাইছেন না।’

দল থেকে শুক্রবার বহিষ্কৃত মজিবুর রহমান মঞ্জু বিবিসিকে বলেন, জামায়াতের ভেতর তরুণ প্রজন্মের অনেকেই দলে সংস্কারের জন্য উদগ্রীব, তাদের অনেকেই ১৯৭১ এ দলের বিতর্কিত ভূমিকা স্পষ্ট করে সামনে এগুনোর পক্ষে।

তিনি বলেন, “আমি সেটা সাহস করে বলেছি, অনেকে সেটা বলতে পারেন না। বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি আশাবাদী আমাদের এই দাবী দল অনুধাবন করবে, এটা হবেই।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াতের বৃহত্তর ফোরামে এখনও ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং তার বিবৃতি নিয়ে তেমন আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। তবে জানা গেছে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে এটা নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা চলছে যদিও তা গোপন রাখা হচ্ছে।

এদিকে শুধু দলের পক্ষ থেকে শুক্রবার ছোটো কয়েক লাইনের একটি বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যে কোন সদস্যের স্বীকৃত অধিকার…আমরা আশা করি তার সাথে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

তবে জামায়াতের ফেসবুক পাতায় কর্মী-সমর্থকরা বিষয়টি নিয়ে কম-বেশী কথা বলতে শুরু করেছেন।

ওয়াহেদুল আলম নিক্সন নামে একজন লিখেছেন, “জামায়াতে সংস্কার জরুরী ! এভাবে নিশ্চুপ ও ধীরে চলার নীতি ইসলামী দলের কাজ হতে পারে? আজীবন একরকম থাকা যায় না, মাঝে মাঝে লোক মুখের পরামর্শগুলো বিবেচনায় নেয়া উচিৎ ! ৭১ এ অবশ্যই জামায়াত স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তাইলে একবার#sorry বলতে কি সমস্যা?”

নুর নবী নামে আরেকজন লিখেছেন, “রাজ্জাক সাহেবের মূল্যায়ন যথাযথ। সময় এসেছে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন প্রজন্ম কে ৭১ এর অপবাদ থেকে বের করে এনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।”

তবে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বা মজিবুর রহমান মঞ্জুর তীব্র সমালোচনাও রয়েছে অনেক মন্তব্যে, তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

খালেদ আহমেদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “জামায়াতের নাম পরিবর্তন, সংস্কার ক্ষমা চাওয়া এই বিষয় গুলি মোটেও যৌক্তিক বলে মনে করিনা, নাম পরিবর্তন সংস্কার আর ক্ষমা চাইলেই যে জামাত কে দল মত নির্বিশেষে সবাই দুধে ধুয়া তুলসীপাতা হিসেবে গ্রহণ করে মাথায় তুলে নিবে এমন চিন্তা করা বোকামি, কারণ জামায়াত যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছে, এই আদর্শিক পথে বাধা আসবেই আসবে, ইতিহাস তার সাক্ষী।”

জামায়াতের ফেসবুক পাতায় মাহমুদুল হাসান নামে আরেকজন লিখেছেন – “আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে জামায়াতের অবস্থান পরিষ্কার হওয়া দরকার। তবে ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।”

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলার কারণে জামায়াতের ভেতরে তর্ক-বিতর্কের খবর খুব একটি বাইরে আসেনা, তবে বেশ কিছুদিন ধরেই ভেতরে ভেতরে ভেতরে দলের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। এমনকী ২০১১ সালে কারাগার থেকে দলের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান একটি চিঠিতে ‘নতুন নামে নতুন নেতৃত্বে’ জামায়াতকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।

তবে এসব বিতর্ক সবসময় দলের জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাপা দিয়ে রেখেছেন। সংস্কারপন্থীদের সবসময় চাপে রাখা হয়েছে। তার কারণ হিসাবে কাদির কল্লোল বলেন – “এখনও বয়স্ক, পুরনো লোকজনই জামায়াতের জেলা পর্যায়ের আমীর, গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তে তাদেরই শুধু ভোটাধিকার রয়েছে। ফলে, নতুন প্রজন্মের জামায়াত নেতা-কর্মীদের কথা এখনও গুরুত্ব পায়না।”

জামাতের রাজনীতির ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক এবং সিনিয়র সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবর বিবিসিকে জানিয়েছেন, আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং বক্তব্য জামায়াতের শীর্ষং নেতৃত্বকে বেশ নাড়া দিয়েছে। “এটা তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। দলের সংস্কার প্রশ্নে তাদেরকে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”