পরিবারের সবাইকে হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি ১১ বছরের রামিম

গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত হয় আশেপাশের ভবনগুলো।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪১ জন। এদের মধ্যে দুইজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এদিকে ওই দিন দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন রাশিদুল (৩৯)। চকবাজারের পাশেই ছেলের বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতে যাচ্ছিলেন পরিবারটি। কিন্তু রাস্তায় পুড়ে মরতে হয়েছে তিনজনকে। গত বুধবার চকবাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বাবা রাশিদুল (৩৯), মা সোনিয়া ইসলাম (৩১) ও ছোটভাই মিহির (৪)। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন আরেক ছেলে রামিম।

হাতিরপুল এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কাজ করতেন রশিদুল। লালবাগের জুরাইনগুল এলাকায় থাকতেন পরিবার নিয়ে। সেখান থেকেই এক রিকশায় চড়ে রওনা হয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে যানজটে আটকে যায় তাদের রিকশা। ঠিক তখনই ঘটে বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে রামিম রিকশা থেকে লাফিয়ে পড়েন।

এদিকে তার শরীরের ১১ শতাংশ পুড়ে গেলেও প্রাণে বেঁচে যান তিনি। আর আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে মরে তার বাবা, মা ও ভাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ দেখেই বোঝা যায় মিহিরকে বাঁচাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন রশিদুল। ছেলের গায়ে যেন আঁচ না লাগে তার জন্য জাপটে ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি কারও।

এদিকে পরিবারটির বেঁচে যাওয়া একমাত্র সদস্য ১১ বছরের রামিমকে গত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাবা, মা, ভাই হারিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে এখন একা।