অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরার বর্ণনা দিলেন মোর্শেদ

গতকাল বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদে ফিরে আসা সৌভাগ্যবানদের একজন মঞ্জুর মোর্শেদ মশাল। সেই ভয়াবহ সময়ের বর্ণনা দিলেন তিনি। এফ আর টাওয়ারের চারটি ফ্লোরে নেটওয়ার্কের অফিস আছে। মোর্শেদ নেটওয়ার্কের ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট ম্যানেজার।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অফিসের ফ্রেসরুমে ছিলাম আমি। জোহরের নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিলো। মাত্রই ওজু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ শুনলাম। কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। খানিকবাদে আরেকটু জোরে আওয়াজ। প্রথমে ভাবলাম কেউ দুষ্টামি করছে।’

‘কিন্তু কেন যেন মস্তিস্কের কোনায় একটা সতর্ক সঙ্কেত বেজে উঠলো। ভেতর থেকেই শুনলাম একজন বলছে-দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যাও। দরজায় তালা। মানে অফিসে প্রবেশের দরজায় তালা দিতে বলছে কেউ। কয়েক সেকেন্ড পর দেখি কারেন্ট অফ। তখনই বুঝলাম সামনে বড় বিপদ।’

‘অন্ধকারে ফ্রেসরুমের দরজা খুলে আমি তো অবাক, অফিসে চারধারে দৌড়াদৌড়ি। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আশপাশ। চেঁচামেচি ও আতঙ্কের মধ্যেই শুনলাম-আগুন, আগুন লেগেছে। এই ভবনের চারটা ফ্লোরে আমাদের অফিস। ৫, ৯, ১৭ ও ১৮ নম্বর ফ্লোরে। আমি ছিলাম ১৭ নম্বর ফ্লোরে।’

‘প্রথমেই নিজের টেবিলের দিকে ছুটে আমার ম্যাকবুক ব্যাগে নিলাম। সবাই মিলে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত হলো নিচে নয়, আমরা উপরে ছাদে উঠবো। ততক্ষনে সিঁড়িঘর ধোঁয়ায় ভরে গেছে। পিলপিল করে মানুষ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে। সবাই আতঙ্কগ্রস্থ। হুড়োহুড়ির মধ্যেই অফিসের আরো কয়েকজনের সঙ্গে আমিও ছাদের দিকে ছুটতে শুরু করি।’

‘ভবনের ২২ তলার ছাদে প্রচুর মানুষ। পাশের লাগোয়া ভবন আহমেদ টাওয়ারের ২২ নম্বর ফ্লোরের নির্মাণ কাজ চলছে। ছাদের সমান্তরাল সেই ভবনের একটি গ্রিল ভেঙ্গে সবাই সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে। সেই পথ ধরেই আমরা আহমেদ টাওয়ারে চলে এলাম। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম। নিচে তখন হাজার হাজার মানুষ।’

‘পাশের এফ আর টাওয়ার ধোঁয়ায় ঢাকা। যারা সিঁড়ি বেয়ে অন্ধকারে উপরে উঠতে বা নিচে নামতে পারেনি তাদের আর্তি শুনছি, অসহায়ত্ব নিয়ে। উফ, কি কষ্ট!’

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে দুপুর পৌনে একটায় লাগা আগুন রাত আটটার দিকে নিভেছে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভয়াবহ এই আগুনে বিদেশি নাগরিকসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৭০ জন।