আল্লাহর ৯৯টি নামের কোনোটির অর্থই সহিংসতা নয়: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন অর্গাইনাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে গতকাল ১ মার্চ শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘শাব্দিকভাবেই ইসলাম অর্থ শুধু শান্তি নয়। আল্লাহর ৯৯টি নামের কোনোটির অর্থই সহিংসতা নয়। একইভাবে প্রত্যেক ধর্মই শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলেছে।’ এদিকে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানোয় একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ পাকিস্তান ওই সম্মেলন বর্জন করে।

এ সময় সম্মেলনে সুষমা বলেন, ‘পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘লা ইকরাহা ফিদ-দ্বীন। অর্থাৎ ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই।’ তিনি বলেন, ‘সূরা হুজরাতে বলা হয়েছে- হে মানবজাতি, আমি তোমাদের এক জোড়া পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে দিয়েছি। যেন তোমরা একে অপরকে চিনে নিতে পার। তাদের কেউ একে অপরকে ঘৃনা করতে পারে না।’

এ মসময় শিখ ধর্ম প্রবর্তক গুরু নানক ও ঋগ্বেদ থেকে একই ধরনের উক্তিও তুলে ধরেন সুষমা স্বরাজ। দীর্ঘ বক্তব্যে বিভিন্ন মুসলিম দেশের সঙ্গে ভারতের আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন সুষমা। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠী কাজ করে সেকথাও স্মরণ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সুষমা স্বরাজ আরও বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ১৩০ কোটি নাগরিক যার মধ্যে সাড়ে ১৮ কোটি মুসলমান ভাই-বোন রয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের অভিবাদন জানাই। ভারতের ভিন্ন সংস্কৃতির সব রাজ্যেই মুসলিমরা বসবাসর করছে। তারা তামিল, তেলেগু, মালাইলাম ও মারাঠি, বাংলা এবং বজপুরিসহ সব ভাষায়ই কথা বলে। তারা বিভিন্নরকম খাবার খেয়ে সেখানে অভ্যস্ত। তারা এসব অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে ভালবাসে এবং প্রজন্মান্তরে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অন্য অমুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করে আসছে।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের বৈচিত্রপূর্ণ সমাজ ও সহাবস্থান সত্যি প্রশংসাযোগ্য। তবে সেখানে অল্পসংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী বিষাক্ত ও উগ্র মতাদর্শ ছড়ানোর চেষ্টা করে।’

এ সময় পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে সুষমা বলেন, ‘মানবসভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে সব রাষ্ট্রকে জানাতে হবে— জঙ্গিদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় কারা জোগায়। সেই দেশগুলিতে জঙ্গি আস্তানাগুলি যাতে ধ্বংস করা হয় এবং পুঁজির জোগান বন্ধ হয়, তার জন্য পদক্ষেপ করতে হবে।’

সুষমা আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে শুধু সামরিক ও কূটনৈতিক হাতিয়ারই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ধর্মের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা ও তার প্রচার।’