জাবির হলে সন্তান প্রসব, নবজাতককে তালাবন্দি করে হাসপাতালে মা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হলে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসবের পর সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে বাক্সে তালাবন্দি করে হাসপাতালে গেলেন মা। প্রসব বেদনা সহ্য করতে না পেরে মা হাসপাতালে গেলেও দীর্ঘক্ষণ অযত্নে অবহেলায় ছিল নবজাতকটি। পরে নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে বাক্স থেকে উদ্ধার করে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে।

জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ অযত্নে অবহেলায় শনিবার রাত নয়টা ৪০ মিনিটে নবজাতকটি হাসপাতালে মারা গেছে তবে মা জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

আবাসিক ছাত্রী ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের ৪২৬ নং কক্ষে এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন এক ছাত্রী। তিনি ওই রুমেরই আবাসিক ছাত্রী। পরে হল প্রশাসনকে প্রসব বেদনার কথা জানিয়ে বাচ্চাকে ট্রাঙ্কে তালা দিয়ে মেডিকেলে যান। পরে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ওই রুমের একটি ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে নবজাতককে উদ্ধার করে মেডিকেলে নেয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর মোবাইলে বলেন, ‘নয়টা ৪০ মিনিটে নবজাতকটি মারা গেছে। আর মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক (ক্রিটিক্যাল)। তবে মেয়েটি বিবাহিত কিনা এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর নিশ্চিত করতে পারেননি।’

বান্ধবীদের সূত্রে জানা গেছে, অন্তঃসত্তার বিষয়টি ওই মেয়ে লুকিয়ে রখেছিলো। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই ছাত্রী নবজাতক প্রসব করে কাউকে না জানিয়ে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখে। তার রুমমেট রুমে আসলে তাকে শুধু প্রসববেদনার কথা জানায়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে জানায়। চিকিৎসাকেন্দ্রের নার্স এসে তাকে হাসপাতলে নেয়ার পরামর্শ দিলে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়।

পরে ছাত্রীরা যখন বলছিলো ঘর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। পরে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙ্গে বাচ্চাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যাই। ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে নবজাতককে উদ্ধার করে হল প্রশাসন। এ সময় বাচ্চার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং শরীর নীল বর্ণ ধারণ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে বাচ্চাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই (মায়ের কাছে) হাসপাতালে নেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (সন্ধ্যায়) জানান, ‘বাচ্চাকে যখন মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় তখন তার শরীর সম্পূর্ণ নীল রং ধারণ করেছিল। পরে তাকে অক্সিজেন দিয়ে স্বাভাবিক করে মায়ের কাছে পাঠানো হয়।’

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে হলে যাই। ছাত্রীরা যখন বলছিলো ঘর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তখন ৪২৬ নং রুমে গিয়ে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে বাচ্চাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যাই।’

তিনি বলেন, ‘তথ্য গোপন করে মেয়েটি অপরাধ করেছে। এতে অনেক বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। এই ঘটনায় তদন্তের জন্য হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক লাবিবা খাতুন তানিয়াকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানান আলোচনা সমালোচনা চলছে। ওই ছাত্রী বিবাহিত নাকি অবিবাহিত এব্যাপারে কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে নাই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে ও্ই ছাত্রী অবিবাহিত।