নিউজিল্যান্ডের সব মসজিদ বন্ধ রাখার ঘোষণা

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছের একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা ওই মাঠে অনুশীলনে করছিলেন। অনুশীলন শেষে তারা মসজিদটিতে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। তবে তারা মসজিদে প্রবেশের আগেই এই হামলার ঘটনা ঘটায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন । এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ক্রাইস্টচার্চে একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর গুলিতে ৩ বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধদের সার্বিক খোঁজখবর রাখছে নিউজিল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন।

এদিকে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর ভয়াবহ হামলার পর দেশটিতে একদিনের জন্য মসজিদ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের।

খবরে বলা হয়, পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে এবং রাস্তায় নামতে নিষেধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল-নূর মসজিদে পুরো হামলা লাইভ স্ট্রিম করে বন্দুকধারী অস্ট্রেলিয়ান ব্রেনটন ট্যারেন্ট। পুরো হামলার ১৭ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ স্ট্রিম করেন।

এ বিষয়ে ক্যান্টারবারি পুলিশ জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ওই ভিডিও ফুটেজ সরিয়ে ফেলতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ক্রাইস্টচার্চের ওই ঘটনার ভয়াবহ ভিডিও অনলাইনে ঘুরে ফিরছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা সবাই জোরালোভাবে আবেদন জানাবো তারা যেন ওই লিংক শেয়ার না করেন।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ব্রেনটন ডিনস অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত আল-নূর মসজিদে গাড়ি চালিয়ে আসেন ওই হামলাকারী। পরে তিনি কাছেই একটি জায়গায় গাড়ি পার্ক করে লাইভ স্ট্রিম শুরু করেন। তার গাড়ির সামনের সিটে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে। এরপর তিনি নিজেকে অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত করে মসজিদে প্রবেশ করে এবং মসজিদের দরজায় থাকা এক ব্যক্তিকে গুলি করে।

মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটনের কাছে অন্তত একটি সেমি-অটো অস্ত্র এবং বেশ কয়েক ক্লিপ গুলি ছিল। সে মসজিদে ঢোকার পর এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে হামলাকারী। সে থেমে থেমে গুলি চালাতে থাকে। এসময় বেশ কয়েক দফায় সে বন্দুক রিলোড করেন।

এরপর সে মসজিদের সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যান। মসজিদে তিন মিনিট থাকার পর রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে এলোমেলোভাবে গুলি চালায়। এমনটি গাড়িতে থাকা গুলি নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় গুলি ছোঁড়ে ব্রেনটন। এসময় তিনি বলেন, মনে হচ্ছে আজ আমরা কোনও পাখি পাবো না।

পরবর্তীতে সে আবারও আল-নূর মসজিদে প্রবেশ করে এবং জীবিত ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে গুলি করেন। এবার মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তিনি রাস্তায় থাকা এক নারীকে ক্রমাগত গুলি করতে থাকেন।

এরপর সে তার গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এসময় একটি গাড়ি তার পথরোধ করার চেষ্টা করলে ব্রেনটন একটি শটগান থেকে বেশ কয়েকবার গুলি ছোড়ে। আর এভাবে ব্রেনটন যখন ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়, তখন সমাপ্তি ঘটে ১৭ মিনিট ব্যাপ্তির ওই ভিডিওটির।

ক্ষুদেব্লগ টুইটারে হামলাকারী নিজের পরিচয় দিয়েছেন ব্রেনটন ট্যারেন্ট নামে। তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাফটন থেকে এসেছেন। হত্যাকাণ্ড ঘটনার আগে টুইটারে ৮৭ পাতার ইশতেহার আপলোড করেছেন হামলাকারী। এরমাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলার আভাস আগেই তিনি দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, একটি আধা স্বয়ংক্রীয় শর্টগান ও রাইফেল দিয়ে সাউথ আইল্যান্ডে আল নূর মসজিদে অন্তত ৫০টি গুলি ছোড়েন ২৮ বছর বয়সী ব্রেনটন ট্যারেন্ট। তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাফটন থেকে এসেছেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী তরুণ বলেন, আমি গুলির শব্দ শুনে যতটা সম্ভব দৌড়ে পালিয়েছি। এ সময় আমি অনবরত শুধু গুলির শব্দ শুনেছি।

হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত এক নারীসহ চার ব্যক্তিকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আটকের সময় তাদের একজন সুইসাইড ভেস্ট পরা অবস্থায় ছিলেন।

এ হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান আনোয়ার আলসালেহ। আজ জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদে। ছোট একটি কক্ষে যখন তিনি ওজু করছিলেন তখন হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। তার ওই ঘরের পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন বন্দুকধারী। তখন তিনি নিজেকে আড়াল করেন। এখন পর্যন্ত ৪৯ জন মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। সংবাদ দ্য প্রেস।

আনোয়ার বলেন, ঘটনা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। তখন তিনি মসজিদের ভেতর অনেকগুলো লাশ পড়ে থাকতে দেখেন, তাদের মধ্যে নারি ও শিশুর লাশও ছিল।

নিউজিল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্টাফ নিউজকে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘তিনি (বন্দুকধারী) ভিতরে ঢুকলেন এবং মসজিদের সবাইকে শ্যুট করা শুরু করলেন। কমপক্ষে ৫০ বার গুলি ছুঁড়েছেন। তার সঙ্গে একাধিক ম্যাগজিন ছিল। কয়েকশ রাউন্ড হতে পারে।’ তবে হামলাকারী মাথায় হেলমেট থাকায় তার সম্পূর্ণ চেহারা দেখতে পারেননি তিনি।

হাতের রক্ত কাপড় দিয়ে আটকে ওই ব্যক্তি আরও জানান, হামলার সময় মসজিদের একটি গ্লাস হাত দিয়ে ভেঙে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ সময় গ্লাসের সঙ্গে লেগে তার হাত কেটে যায়।