মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে জীবনের শেষ কথা জানালেন সাজ্জাদ

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এই টাওয়ারে আগুন লাগে। ভবনের ৯ম তলায় আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন ২৩তলা ভবনের বেশ কয়েকটি তলায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৭টায় আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

আর ভবনে ছিলেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বলুগ্রামের পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ (৪৬)। এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময় দুপুর ১ টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় সাজ্জাদের। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ। ছোট ভাই পারভেজ খসরু একটি কলেজের শিক্ষক।

সে টাওয়ারের ১১ তলায় অবস্থিত কার্গো পরিবহন কোম্পানি স্ক্যানওয়েল লজিস্টিকসের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। একমাত্র ছেলে সিয়াম ও স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন তিনি। সিয়াম রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

আগুন লাগার পর জীবনের শেষ সময়ে পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ (৪৬) তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরুতে পারবো কি না জানি না। আমার জন্য দোয়া করো।’

নিহতের সাজ্জাদের ছোট ভাই পারভেজ খসরু বলেন, দুপুরে ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিকালে এক লোকের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে মৃত্যুর খবর আমরা পাই। এরপর বনানীর ১৫ নং রোডে অবস্থিত বনানী ক্লিনিকের বারান্দায় লাশ পড়ে থাকতে দেখি।

তিনি জানান, আগুন লাগার পর ওই ভবনের ১১ তলা থেকে ডিশের কেবল ধরে নামতে গিয়ে আমার ভাই নিচে পড়ে যায়। এতে তার মৃত্যু হয়। সাজ্জাদ এ মাসের ২৫ তারিখে সৌদি আরব থেকে ওমরাহ হজ্জ্ব পালন করে দেশে ফিরেছেন।

স্বজনরা জানিয়েছেন, এ ঘটনার সময় পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর এ সময় আগুন দেখে জীবনের শেষ সময়টুকু স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। আগুন থেকে জীবন বাঁচতে ডিশলাইনের কেবল বেয়ে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যান সাজ্জাদ। ১১ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত নেমে এসির বক্সের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান।

এদিকে, সাজ্জাদের মৃত্যুর খবর গোপালগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। আজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় নিজ গ্রামে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।