রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল, বাড়তে পারে নিরাপত্তা ঝুঁকি

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার: মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের গত দেড় বছর ধরে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, লেখাপড়া সহ সার্বিক সহযোগিতা করা হলেও আশ্রিত রোহিঙ্গারা বরাবরেই অনধিকার চর্চা করছেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, রোহিঙ্গা মাদক পাচার, খুন, ধর্ষণ সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তারা দেশের প্রচলিত আইন না মেনে আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে অবৈধভাবে স্থানীয়দের মাঝে মিশে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় সচেতন মহল বলছেন, বড় ধরণের কিছু ঘটার আগে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রনে আনা জরুরী হয়ে পড়ছে। তাই প্রথমেই বন্ধ করতে হবে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে স্মার্ট ফোন ব্যবহার।

জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩১ টি আশ্রয় শিবিরে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের মাঝে অনেকের ব্যস্ত সময় কাটছে ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। নিজ দেশ মিয়ানমারে ঠিকমত খেতে-পড়তে না পারা বেশিরভাগ অশিক্ষিত এই জনগোষ্টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা ভিডিও আর সংবাদে বেশি প্রভাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জনান সচেতন মহল।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছে আব্দুল খালেক নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। তিনি মিয়ানমারের বলিবাজার আবদুস সালামের ছেলে। তার ভাই-বোন সহ আত্মীয়-স্বজনরা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তার এই ভিডিওটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইতিমধ্যে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হয়েছে বলে জানা যায়। এই ধরনের ভিডিও অনেকটা উসকানী হিসেবে কাজ করছে।

রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও সীম কোম্পনীদের দায়ী করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন আইন অনুযায়ী জাতীয় সনদ পত্রের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করে সীম ব্যবহার করতে হয়। সেখানে রোহিঙ্গারা কিভাবে খুব সহজেই মোবাইল ব্যবহার করে? রবি-গ্রামীন সহ বিভিন্ন সীম কোম্পানীর সেবা গ্রহণ করছে। নিশ্চিয় এসবের পিছনে এদেশের’ই কিছু অসাধু মহল রয়েছে যারা অল্প টাকার জন্য নিজ দেশের ক্ষতি করছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে খবর নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা ব্যবহার করছে মোবাইল ফোন। তাদের মধ্যে রয়েছে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ রাহেল। যার মোবাইল নাম্বার ০১৮৮৫৪৫৫৯.., রহিমা’র আক্তার (০১৭৭০৩৩৯৬..), মোস্তাফা কামাল (০১৮৩৮৯৭৩৩..), এনায়ত উল্লাহ (০১৮৭৮৪১৭৬..), জাবের হোসেন (০১৮৪৬৯৯৪২..)। এই পাঁচ জন ছাড়াও বেশিরভাগ রোহিঙ্গাদের হাতে রয়েছে মোবাইল।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরর্ণাত্রী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী জানান, আইডি কার্ড সহ নানা প্রক্রিয়ার কারণে বাঙ্গালীরা সীম পেতে হিমসীম খাচ্ছে আর সেই জায়গায় রোহিঙ্গারা কিভাবে সীম পাচ্ছে তা বুঝে আসছে না। এই অব্যবস্থাপনার জন্য নিশ্চয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর প্রশাসন দায়ী। রোহিঙ্গাদের এই বিষয়টা অবহেলা করলে চলবে না। দিন দিন তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের নেটওর্য়াক মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার সহ সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই নেটওয়ার্ক দিন দিন শক্তিশালী হয়ে পড়ছে।

তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত হলেও তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষিত কুচক্রি রয়েছে। আর তাদের ইন্দনে’ই ঘটতে পারে বড় ধরণের অঘটন। তাই সময় থাকতে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহারের উপর প্রশাসনের বিধি নিষেধ জারী করতে হবে।

কক্সবাজারের স্থানীয়দের অধিকার আদায় আন্দোলন সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ কমিল জানান, আমাদের প্রধান ২টি দাবী রয়েছে। তারমধ্যে প্রথম হল রোহিঙ্গারা যেন কোনভাবে বাংলাদেশী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে না। আর দ্বিতীয় হল কোন এসজিও-আইএনজিও যেন রোহিঙ্গাদের চাকরি দিতে না পারে।

কারণ রোহিঙ্গা ত্রাণের মাল বিক্রি করে নগদ টাকা হাতে নেয়। এছাড়া কিছু অসাধু এনজিও-আইএনজিও মোটা বেতনের চাকরী দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। এতে তারা বাড়তি অর্থ পাচ্ছে। এই টাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করছেন। রোহিঙ্গারা মোবাইলে-মোবাইলে যোগাযোগ করে ইয়াবা ব্যবসা সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের কোন অবস্থায় বাংলাদেশী সীম ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরী দেওয়া যাবে না। এছাড়া ক্যাম্প এলাকায় বাড়াতে হবে গোয়েন্দা নজরদারী। নয়ত দিন দিন জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, একজন মানুষ মোবাইল ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি সঠিক নিয়মের মাধ্যমেই তা করতে হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তা আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সত্যিকার অর্থে এসব বিষয় এখন ভাবতে হবে। এ বিষয়ে তেমন কোন আইন এখনো প্রয়োগ করা হয়নি।

তবে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে যেন কোন ধরণের নাসকতা করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। ক্যাম্প এলাকাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এসব ছাড়াও পুলিশের ৬ টি ক্যাম্পের ৯৯০ জন পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করছে। টুটাল ৩১ টি ক্যাম্পে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর সীম কিভাবে তারা ব্যবহার করছে এই প্রসঙ্গে বলেন বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।