ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো গেলো না। মা-বাবার আর্তি, সতীর্থসহ সকলের প্রার্থনা আর চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে পাঁচদিন একটানা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১১ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন নুসরাত।
এদিকে যখন নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের জনগণ। সর্বত্র উঠেছে বিচারের দাবি। ঠিক এমন সময়ই নুসরাতকে নিয়ে কটূক্তি করেন ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগম।
জানা যায়, নুসরাতের হত্যার বিচারের দাবীতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চাইলে অনুমতি দেননি ফেনীর সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগম। সেইসঙ্গে ঘটনার জন্য নুসরাতকেই দায়ী করে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ছাত্রী তাহমিনা রুমি ও স্নিগ্ধা জাহান রিতার ফেসবুক টাইমলাইন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এ ব্যাপারে তারা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ব্যানারে আমরা একটা মানববন্ধন করতে কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের কাছে শনিবার সকাল ৯টায় অনুমতির জন্য গিয়েছিলাম। আমরা কয়েকজন ম্যাডামের রুমে যাই।’
‘তারপর ম্যাডাম যা বললেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই। ম্যাডাম আমাদের বললেন নুসরাতকে তার স্যার বলেছিল পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেবে, তাই নুসরাত নিজ ইচ্ছায় স্যারের কাছে গিয়েছিল। অথচ এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছি কলেজের পিয়নকে দিয়ে নুসরাতকে ডাকা হয়েছে।’
‘তবে কি আমরা এতদিন ভুল জানতাম? আমাদের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছে মিডিয়া? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয় আমার। কে দেবে এসব প্রশ্নের উওর? কোথায় পাব এসবের উওর? আমাদের ম্যাডাম আরও বলেছেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’
‘বর্তমানে ঘটতেছে, কারণ বর্তমান মেয়েরা অনেক লোভী। নুসরাত মেয়েটা ধোয়া তুলসী পাতা না। মেয়েটার সঙ্গে যেটা হয়েছে তার জন্য মেয়েটাই দায়ী। এটার জন্য মানববন্ধন করতে আমি কখনও অনুমতি দেব না। তোমরা ক্লাসে যাও।’
এদিকে নুসরাতকে নিয়ে কটূক্তি করায় ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের বিচারের দাবি উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার এমন ধৃষ্টতাকে ক্ষমার অযোগ্য বলে মত দিয়েছেন। অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি তাদের।
অধ্যক্ষ তাহসিনা বেগমের বিরুদ্ধের শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ শেয়ার করে। অন্যান্য কর্মসূচিসহ তিনি কলেজ অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেন বলেও একাধিক শিক্ষার্থী জানান।
কিন্তু বিষয়টি অস্বীকার করে অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের বলেছি- বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। এখন মানবন্ধন করার কোনো প্রয়োজন নেই।’
এ সময় নুসরাতকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরণের কোনো কটূক্তি আমি করিনি।’