১৭ বছর ধরে অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন ১০৪ বছর বয়সী রাবেয়া

বয়স এখন ১০৪। নাম তার রাবেয়া খাতুন। এ বয়সে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তিনি পারেন না। বয়সের ভারে ন্যূব্জ এই শতবর্ষীকে হাজিরা দিতে হয় আদালতে। গত ১৭ বছর ধরে একটি অস্ত্র মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তিনি। তাছাড়া খেটেছিলেন ছয় মাসের জেলও।

এদিকে ঢাকার একটি আদালতে গত ১৭ বছর ধরেই চলমান ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আদালতের ধার্য তারিখে নিজেই আদালতে এসে হাজিরা দেন রাবেয়া। অধিকাংশ সাক্ষীর সাক্ষ্য না হওয়ায় ঝুলতে থাকা এই মামলায় আর কতদিন তাকে হাজিরা দিতে হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ।

তাছাড়া মামলার হাজিরা দিতে হলেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন শতবর্ষী রাবেয়া।

আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার আদালতে হাজিরা দিতে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ১০৪ বছর। বিচারক হয় আমাকে খালাস দিক, না হয় মেরে ফেলুক।’ এই বয়সে আর আদালতে আসতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

এদিকে আদালতে বিচারাধীন এ মামলায় আজ বুধবারও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিনও তিনি আদালতে হাজির হন। সাক্ষী না আসায় ওই আদালতের বিচারক মো. আল মামুন আগামী ৩১ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন।

এ ব্যাপারে আইনজীবী আব্দুর সাত্তার দুলাল বলেন, ‘মামলাটিতে ১৫ জন সাক্ষী রয়েছে। ছয় জনের সাক্ষ্য হয়েছে। এখনও মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষী হয়নি। আমরা জানতে পেরেছি, তদন্ত কর্মকর্তা মারা গেছেন। তাই আদালত বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ প্রতিবেদন তলব করেছেন। ওই প্রতিবেদন আসলে মামলাটি নিষ্পতির দিকে নেওয়া যাবে।’

কিন্তু এ ব্যাপারে রাবেয়া বেগমের আইনজীবী মেহেদী হাছান পলাশ বলেন, ‘একজন বয়স্ক মহিলা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় ১৭ বছর ধরে আদালতে আসছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছয় মাস জেলও খেটেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী না আনতে পারায় ১৭ বছর ধরে মামলাটি চলছে। কবে শেষ হবে তাও ঠিন নেই।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পূর্বের বিচারক মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ধার্য করেন। ওই বিচারক বদলি হয়ে যাওয়ার পর নতুন বিচারক পুনরায় মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণে ফিরিয়ে নেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সাক্ষী হয়েছে। এরপর গত পাঁচ বছর রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করেনি।’

এদিকে মামলার নথিকে দেখা যায়, গত ২০০২ সালে ২ জুন তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া এ মামলায় একই বছর ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। এর পরের বছর ২৪ মার্চ চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। ২০০৭ সালের ১৮ জানুয়ারি সাক্ষ্য শুরু হওয়া এ মামলায় ২০১৪ সালের ১১ মে পর্যন্ত ৬ জনের সাক্ষ্য হয়। ১৫ জন সাক্ষী থাকা এ মামলায় এরপর আর কোনো সাক্ষ্য হয়নি।

এদিকে মামলার এজহারে পুলিশের অভিযোগ, তেজগাঁও থানাধীন কাজীপাড়াস্থ ৩/ক, গার্ডেন রোডের আব্দুল মজিদের ঘরের দক্ষিণ পাশে ২০০২ সালের ১ জুন রাত সাড়ে ১১টায় একটি চটেরব্যাগসহ পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন রাবেয়া বেগম। ওই সময় ব্যাগের ভেতর ছয় রাউন্ডগুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়।

এরপর ওই ঘটনায় তেজগাঁও থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে রাবেয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ছয় মাস কারাভোগের পর রাবেয়া খাতুন জামিন পান। মামলার চার্জশিটে রাবেয়া এবং পলাতক জুলহাস নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়।