শুকনো মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে এবং বর্ষা মৌসুমে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাসরুম ব্যবহার করতেই বাধ্য হচ্ছে তারা। জরাজীর্ণ এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই নিয়মিত ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা। কুমিল্লা জেলার সাড়ে চার শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ছাদেরও একই অবস্থা। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শঙ্কা রয়েছে হতাহতের। এমন ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয় ভবনগুলোর চারদিকের দেয়াল ও পিলারের আস্তর খসে ফাটল দেখা দিয়েছে, ছাদের আস্তর খসে পড়ছে, মেঝে নিচের দিকে দেবে গিয়েছে, বৃষ্টির পানি ছাদ চুইয়ে পড়ছে, মেঝেতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, ভবনের চালা ভেঙে পড়ছে, জানালা-দরজার অবস্থাও করুণ আর কোনও কোনও ভবনের প্লাস্টার ক্ষয়ে গিয়ে রড বেরিয়ে পড়েছে।
কয়েকটি উপজেলায় খবর নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে এবং বর্ষা মৌসুমে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাসরুম ব্যবহার করতেই বাধ্য হচ্ছে তারা। তাতে অবশ্য পুরোপুরি নিস্তার মেলে না। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড়, বই-খাতা পানিতে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন দিন স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিমাণও কমছে।
সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কুমিল্লার ১৭ উপজেলার জরাজীর্ণ ৪শ’৪৮টি বিদ্যালয়ের ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কুমিল্লার সদর উপজেলায় ৪৪টি, বুড়িচংয়ে ৮৩টি, লাকসামে ২৮টি, মুরাদনগরে ৪১টি, নাঙ্গলকোটে ৪৪টি, মেঘনায় ১৪টি, হোমনায় ১৩টি, সদর দক্ষিণে ৪টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৫টি, মনোহরগঞ্জে ১৬টি, লালমাইয়ে ২১টি, চান্দিনায় ৩৯টি, চৌদ্দগ্রামে ৯টি, বরুড়ায় ৪টি, তিতাসে ১১টি, দাউদকান্দিতে ৩৭টি এবং দেবিদ্বারে ৩৫টি। সবচেয়ে বেশি বুড়িচং উপজেলার ৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।
এদিকে, মনোহরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া বেগম জানান, তিন বছর আগে বিদ্যালয় ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। আমরা শিক্ষকরাও অনিচ্ছাসত্বেও ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর পরিমাণ কমে আসছে।
বিষয়টি নিয়ে সুন্দরদৌল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্মৃতি রানী বণিক বলেন, সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টির শ্রেণি কক্ষের সংকট দীর্ঘদিনের। মানসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে একাধিকবার অবহিত করেছি।
বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী বলেন, মাঠ পর্যায়ে জরাজীর্ণ ৪শ’৪৮টি স্কুল অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনগুলোর বেশিরভাগই নিলামযোগ্য। এগুলোর পুনঃনির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। তালিকা করে বিভাগীয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়গুলো সমস্যামুক্ত হবে।