তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে: দুই বান্ধবীকে লেখা চিঠিতে রাফি

গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত জাহান রাফি। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে বোরকা পরা ৪-৫ জন ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। বর্তমানে সে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

এদিকে, দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে নুসরাত জাহান রাফির লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করেছে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) তার বাড়ি থেকে চিঠিটি উদ্ধার করা হয়।

তদন্তকারি সূত্র জানিয়েছে, তার(রাফি) পড়ার টেবিলে খাতায় দুই পাতার ওই চিঠিতে তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছে নুসরাত। ওই চিঠিতে নুসরাত আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করেন। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদদৌলা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাত। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও তার মর্মাহত কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন বলেন, চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে যাদের নাম আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

চিঠিটিতে নুসরাত তার দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন- ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ??? তোরা সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস।”

”তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিসনা। তুই প্রেম করিসনা। ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে…। আমি লড়বো শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’